কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন রাখা সেই ‘ইকবাল’ কক্সবাজারে গ্রেফতার
২১ অক্টোবর ২০২১ ২৩:২৭
কক্সবাজার: কুমিল্লায় মণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে আসা ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তার পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের পর বিস্তারিত জানানো হবে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার তার পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের কথা জানালেও অভিযানে থাকা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে গ্রেফতার ব্যক্তিই ইকবাল হোসেন।
জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে আমরা একজনকে গ্রেফতার করেছি। ধারণা করছি, তিনিই কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে আসা ইকবাল হোসেন। তাকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন- কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন রাখা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত
পুলিশ সুপার ফারুক জানান, কুমিল্লায় নিয়ে আসার পর গ্রেফতার ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত ইকবাল হোসেন সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানটি চালিয়েছে কুমিল্লা পুলিশ। আমরা সহায়তা করেছি। কুমিল্লা জেলা পুলিশ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ইকবাল হোসেন
এদিকে, অভিযানে থাকা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আটক ইকবালই পূজা মণ্ডপে কোরআন রেখে আসা সেই ব্যক্তি বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছেন। তাকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ইকবাল হোসেনের পিতা নূর হোসেন প্রকাশ ভুট্টো, মা আমেনা বেগম। কুমিল্লা সদরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তেলেগনা (সাহাপাড়া) গ্রামে তাদের বাড়ি।
আরও পড়ুন- গুজবে বিভ্রান্ত, উসকানিতে উত্তেজিত না হয়ে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ
এর আগে, বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ জানায়, কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ব্যক্তিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন।
গত ১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লার সদর থানার নানুয়ার দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের এক মণ্ডপে হনুমানের মূর্তির পায়ের ওপর কোরআন শরিফ রেখে ধর্ম অবমাননার জের ধরে বেশকিছু মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজা মণ্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই দিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে কয়েকশ ‘দুষ্কৃতিকারী’ মন্দির-মণ্ডপে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় ‘দুষ্কৃতিকারী’দের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি করলে পাঁচ জন প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ ৮ দাবি শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের
পরবর্তী সময়ে কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ১৩ ও ১৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়া, সিলেটের জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও গাজীপুরের কাশিমপুরসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে ফেসবুকে কাবা শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে বড় করিমপুরের মাঝিপাড়ায় একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বুধবার রাতে পুলিশ জানিয়েছে, এই সহিংসতায় সারাদেশে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন হিন্দু এবং পাঁচ জন মুসলিম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনের সময় ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া, আরও মামলা দায়ের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর