Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২১ ১১:৫৩

ঢাকা: পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৪ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন করা হয়েছে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী সেতু এলাকায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ ঘুচিয়ে এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা করল।

পায়রা সেতুর প্রকল্পপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিম জানান, লেবুখালী পায়রা সেতুতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুরো সেতু সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এ সেতুর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, যে কোনো দুর্ঘটনায় এটি সিগন্যাল দেবে। দেশে প্রথমবারের মতো পায়রা সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে হেলথ মনিটরিং ও পিয়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এর ফলে যে কোনো ধরনের ওভার লোডেড (মাত্রাতিরিক্ত ভারী) যান সেতুতে উঠলে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাবে।

তিনি আরও জানান, একইভাবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ; যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা থাকলেও সিস্টেম সিগন্যাল দেবে। একইসঙ্গে কোনো কিছুর ধাক্কা থেকে রক্ষায় পিলারের চারপাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে সেতুর স্থায়িত্ব বাড়বে।

উল্লেখ্য, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর‘ প্রায় ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের লেবুখালী পায়রা সেতু নির্মাণের মধ্যে দিয়ে উপকূলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।

ব্রিজটি যানচলাচলে উম্মুক্ত হওয়ায় পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। খুলে যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সম্ভাবনার দ্বার।

এ সেতুর ফলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের। পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পথ সুগম হবে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, কোস্টগার্ডের সিজি-বেইজ অগ্রযাত্রা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর।

পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০১৩ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর লেবুখালীতে এসে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ১১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় সেতুটি। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটি নির্মাণে কাজ করছে।

এই সেতু নির্মাণের নকশা কিছুটা ব্যতিক্রম। ৪ লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে এক্সট্রাডোজড ক্যাবল স্টেইড প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি ক্যাবল দিয়ে ২ পাশে সংযুক্ত থাকবে। নদীর জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু হবে। উভয়পাড়ে ৭ কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এই সেতুতে ১৩০ মিটার গভীর পাইল বসানো হয়েছে। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে।

দেশে প্রথমবারের মতো এই সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’ (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) স্থাপিত হচ্ছে। যার ফলে বজ্রপাত ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে সেই বিষয়ে সংকেত দেবে। সেতুর পরিবেশগত ক্ষতি এড়াতেই এই প্রযুক্তি থাকছে।

এ ছাড়াও, সেতুর পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো কিছুর ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে, বাড়বে সেতুর স্থায়িত্ব। আলাদা সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়— সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। বিদেশি অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। সেতুর প্রাথমিক নকশায় অনেক পরিবর্তনে এনে পরামর্শদাতারা টেন্ডারের নথি প্রস্তুত করেন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে দাতা সংস্থার সম্মতি নিতে হয়েছে। ফলে নির্মাণ কাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।

এ ছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় একটি ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। সর্বশেষ এই সেতু নির্মাণে চুক্তি-মূল্য ছিল এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা। সাশ্রয় হচ্ছে ৫২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-তামাবিল মহাসড়ক উভয় সড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প দু’টির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

সারাবাংলা/একে

পায়রা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর