Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২১ ১৮:০৯

ঢাকা: শ্রমিক সংগঠনগুলো সরাসরি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারে না। বিষয়টি শ্রমিক স্বার্থবিরোধী হওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ)। সম্প্রতি হাইকোর্ট ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল নিশি জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টেদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অসৎ শ্রম আচরণের বিচার প্রার্থনার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো পক্ষের ওপর শ্রমিকের নির্ভরতা দূর হলে দেশের সাধারণ শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠনগুলো সরাসরি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারলে শ্রমিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে মনে করে শ্রমিক সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অসৎ শ্রম আচরণ এবং ইউনিয়ন বৈরিতার ফৌজদারি মামলা দাখিলের মর্মে হাইকোর্টের রুল নিশি জারি করার বিষয়টি অবহিত করতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। সংবাদ সম্মেলেনে এ সব তথ্য জানানো হয়।

গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘কোনো শ্রমিক বা শ্রমিক সংগঠন শ্রম আদালতে সরাসরি যেতে পারে না। শ্রমি অধিদফতরের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। বিষয়টি অগণতান্ত্রিক ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী মনে হওয়ায় সংগঠনের পক্ষে আমরা হাইকোর্টে রিট করি। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করা হয়েছে। জনস্বার্থের এই বিষয়টি সবাইকে জানাতেই আজকের এই আয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ওই অর্ডারটি ভার্চুয়াল কোর্টে হয়েছে। তাই সবাইকে জানানো সম্ভব হয়নি। সরাসরি যেন শ্রমিক সংগঠনগুলো আদালতে যেতে পারে, শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে, সে জন্যই ওই রুল জারি করা হয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘অসৎ শ্রম আচরণ এবং ইউনিয়ন বৈরিতার ফৌজদারি মামলা দাখিলের ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে শ্রম পরিচালকের ওপর ন্যস্ত করে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩১৩ (২) (খ) ধারার বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়— ২০০৬ সনে শ্রম আইন পাশ হওয়ার সূচনালগ্নে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে বড় আকারে সংশোধনী হওয়া সত্ত্বেও একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন অধরাই রয়ে গেছে। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যার বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আমরা মনে করি, শ্রম আইনে অনেকগুলো ধারা যুক্ত রয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং শ্রমজীবী মানুষদের মৌলিক মানব অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। তারমধ্যে ২৬, ২৭ (৩), ১৭৯ (২), ১৮০ (১) (খ), ১৮৭ দফার শেষাংশ ধারাসমূহ অন্যতম।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বেশ কয়েকবার আইনটিতে সংশোধনী আনা হলেও এখনও এটি শ্রমবান্ধব হয়েছে বলে বলা যায় না। শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা উপ-ধারায় প্রত্যক্ষভাবে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা উপধারা সন্নিবেশিত রয়েছে। আইনে কিছু অধিকার দেওয়া থাকলেও এ আইনেই কিছু ধারা প্রয়োগ করে। আবার তা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। শ্রম আদালতে যাওয়ার আগে মহাপরিচালকের কাছে অনুমতির জন্য বা তার পক্ষে মামলা দায়ের করার জন্য দরখাস্ত করতে হবে। বলা দরকার মহাপরিচালক নিজে বা তার দফতরের অফিসারদের বিষয়ে আমরা কখনই আশাবাদী হতে পারি না যে তারা সততার সঙ্গে কাজটি করবেন।

এ সব বিষয় বিবেচনা করে গ্রামীণফোন এসপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩১, ৩৮ ও ৪০ অনুচ্ছেদ কার্যকরনের জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধিকার বলে হাইকোর্ট বিভাগে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। দীর্ঘ দিন পরে হলেও গেল ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিব, মহাপরিচালক (শ্রম) ও অপর তিনজনের প্রতি রুল জারি করেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়— গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল শ্রেণিপেশার বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কাছে শ্রম আইনের সকল প্রকার অসঙ্গতি দূর করার মধ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ওই রুলনিশির জন্য নিজ নিজ সক্ষমতার জারি করার জন্য গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন হাইকোর্ট বিভাগের প্রতি ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অসৎ শ্রম আচরণের বিচার প্রার্থনার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো পক্ষের ওপর শ্রমিকের নির্ভরতা দূর হলে দেশের আপামর শ্রমিক এ থেকে উপকৃত হবে এবং দেশের সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন তথা শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে এ যাত্রাপথে আমরা পাশে পাব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাতুজ আলী কাদেরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, প্রচার সম্পাদক-১ মোহাম্মদ আলী ভূইয়া ও প্রচার সম্পাদক-২ জিয়াউর রহমান।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

গ্রামীণফোন মামলা শ্রমআইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর