ঢাকা: দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হিন্দদের বাড়িঘরে হামলায় ৬১১ জন আহত হয়েছেন এবং ৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এছাড়াও সারাদেশে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার ( ৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ বিপু হলে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এ কথা জানান।
তিনি জানান, হিন্দু মহাজোট দেশের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত করেছে। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন হিন্দু। ধর্ষণের শিকার ৫ জন আর পাঁচ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ৪০০ জনের অধিক নারীকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। সারাদেশে আহত হয়েছেন ৬১১জন। ৩১টি মন্দির আগুনে পুড়ে ভষ্মীভূত হয়েছে। পূজা মণ্ডপ ভাংচুর করা হয়েছে ২২৭টি। অগ্নিসংযোগ করে ভষ্মীভূত করা হয়েছে ৯৯৪টি। দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে ৩১টি। এই ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৭ জন হিন্দুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ হাজার ৫০৭টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে। আর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার।
গোবিন্দ চন্দ্র আরও জানান, দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায় ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবকে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু পূজা চলাকালে কুমিল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের ২৫টি জেলায় দুর্গাপূজা মণ্ডপ ও হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মঠ-মন্দিরে হামলা, নির্যাতন, খুনসহ এক বিভিষীকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হিন্দুদের ওপর এই হামলায় কোনো রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক নেতা, সুশীল সমাজ কেউই এই ঘটনায় এগিয়ে আসেনি। গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৫টি জেলায় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আর হিন্দু মহাজোট ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে বুঝতে পেরেছে এসব ঘটনা ছিল পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানেদুষ্কৃতিকারীরা এটাকে উপজীব্য করে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত সকল মন্দির বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া চলতি বছরের আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে উপরোক্ত দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে অন্যথায় হিন্দু সম্প্রদায় সারাদেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।