Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্থবিরতা কাটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ফের কর্মব্যস্ততা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় তিন দিন পর সচল হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কনটেইনার ওঠানামা এবং পণ্যবাহী পরিবহন আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও পুরোদমে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর।

সোমবার (৮ নভেম্বর) রাতে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে পর পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এরপর রাত থেকেই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মোভার, লরি বন্দরে প্রবেশ করতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

সরকারি সিদ্ধান্তে গত বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার পরিবহন চালানো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

এ অবস্থায় সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সব বাস এবং এর সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা সরাসরি যাওয়া দূরপাল্লার বাস চলাচল শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে পণ্য বহনকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, লরি-প্রাইম মোভার চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। ভাড়া বাড়ানোর পর সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও পণ্য বহনকারী পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘটের ইতি ঘটে।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর সোমবার রাত ১০টার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হতে শুরু করে। অন্যদিকে রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারগুলো বিভিন্ন ডিপো থেকে বন্দরমুখী হয়। ফলে জাহাজে পণ্য ওঠানামায়ও গতি ফিরে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পুরোপুরি কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার ধর্মঘটের মধ্যে দিনেও কিছু পরিবহন বন্দরে প্রবেশ করেছে। তবে রাতে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু হয়। পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। জাহাজে রফতানি পণ্যবোঝাই বিলম্বিত হয়েছে। এখন আমরা দ্রুততার সঙ্গে রফতানি পণ্য জাহাজে তোলার নির্দেশনা দিয়েছি, যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাহাজ ছেড়ে যেতে পারে।’

সচিব জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। সোমবার পর্যন্ত ছিল ৩৮ হাজার ১০০ টিইইউস ছিল। মঙ্গলবার সকালে সেটা বেড়ে ৩৯ হাজার টিইইউসে দাঁড়ায়।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ১৪টি এবং বহির্নোঙরে ৬৫টি জাহাজ পণ্য নিয়ে অবস্থান করছিল। জেটি থেকে দু’টি জাহাজ দুপুরে রফতানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়েই শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর জাহাজগুলো থেকে পণ্য ওঠানামা দ্রুতগতিতে চলছে বলে সচিব জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-প্রাইম মোভার যাতায়াত করে। সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউস কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তিন হাজারেরও বেশি টিইইউস কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়। ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টিইইউস কনটেইনার জাহাজে পাঠনো হয়। ধর্মঘটের কারণে রফতানি পণ্য জাহাজে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এতে ডিপোতে আটকে থাকে রফতানি পণ্যবোঝাই ১০ হাজারেরও বেশি কনটেইনার।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমাদের ডিপোগুলোতে ৭ থেকে ৮ হাজার রফতানি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য অপেক্ষায় থাকে। ধমর্ঘটের কারণে ১০ হাজার ৭০০ কনটেইনার আটকে গিয়েছিল। স্বাভাবিক সময়ের হিসেব বাদ দিলে আটকে পড়েছিল প্রায় চার হাজার কনটেইনার। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা ডিপো থেকে দ্রুত কনটেইনার খালাসের ব্যবস্থা করছি।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। রফতানি জাহাজ দ্রুত যেন চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমদানি জাহাজ থেকেও পণ্য খালাস দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে। আশা করছি কোনো সংকট হবে না।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য পরিবহন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর