বেগমগঞ্জের ওসিসহ ৩ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত
৯ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২১
ঢাকা: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান, উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলামকে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বরখাস্ত ওই তিন পুলিশ সদস্যের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এদিন আদালতে তিন পুলিশ সদস্যের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
এর আগে, গত ২৮ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি, এসআই, এএসআই, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চৌকিদারকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই দিন বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনাটি আদালতের নজরে আনায় আইনজীবীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন আদালত। পরে তিন পুলিশ সদস্য হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি, একজন এসআই ও এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে এলজিআরডি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-
- বেগমগঞ্জ থানার ওসি চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত
- বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার
- গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: ওসিসহ ৫ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ
- বেগমগঞ্জের ওই নারীর ভিডিও অপসারণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ
- বেগমগঞ্জের ওই নারীকে ২ বার ধর্ষণ করেছিলেন দেলোয়ার, অবশেষে মামলা
ওই দিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর ভিডিও ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীর বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন আদালত। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
পরে আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার। সদস্য ছিলেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। ওই কমিটির প্রতিবেদনে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় চৌকিদারের অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন বলে মত দিয়েছিল তদন্ত কমিটি। এরপর ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৮ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর সঙ্গে তার আগের স্বামী দেখা করতে তার বাবার বাড়ি একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে যান। বিষয়টি দেখে ফেলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ারের লোকজন ওই নারীর ঘরে ঢুকে ‘পরপুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ’ করার অভিযোগে এবং তাদের ‘কুপ্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে পিটিয়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়।
৪ অক্টোবর দুপুরে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাসহ দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। পরে এ ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
এছাড়া ওই নারীকে বিবস্ত্র ও নির্যাতনের ঘটনায় দেলোয়ার হোসেন দেলুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলা বিচারিক আদালতে চলমান রয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর