পরীর পাহাড় লিখতে নিষেধ করেছেন আদালত: আইনজীবী সমিতি
১০ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম আদালত এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয় নিয়ে থাকা পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ না করতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
বুধবার (১০ নভেম্বর) চট্টগ্রামের দেওয়ানী আদালতের প্রথম সহকারী জজ ইসরাত জাহান এ আদেশ দিয়েছেন বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত রোববার (৭ নভেম্বর) ওই আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি মামলা দায়ের করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। মামলায় জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে বলা হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে যোগদানের আগে সকল সরকারি নথিতে পাহাড়টিকে ‘কোর্ট হিল’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি সেটা পরিবর্তন করে পরীর পাহাড় লেখা হচ্ছে। পরীর পাহাড় নামকে বেআইনি ঘোষণা করে এই নাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলাটি করা হয়েছিল। আদালত এ বিষয়ে জবাব দিতে বিবাদিকে তিন দিনের সময় দিয়েছিলেন।
অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিবাদীপক্ষ জবাব দাখিলে সময় চেয়েছেন। আদালত সময় মঞ্জুর করেছেন। একইসঙ্গে আদেশ দিয়েছেন, কোর্ট হিলকে পরীর পাহাড় হিসেবে প্রচার, নথিপত্রে উল্লেখ এবং পত্র বিনিময়ের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বিবাদীপক্ষ যখন জবাব দাখিল করবেন তখন এ বিষয়ে শুনানি শেষে পূর্ণাঙ্গ আদেশ দেবেন।’
চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণে লালদিঘী এলাকায় সেই পাহাড়ের মূল প্রবেশপথ। সেই পাহাড়ে আদালত সংলগ্ন এলাকায় জেলা আইনজীবী সমিতি সম্প্রতি আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন দু’টি ভবন নির্মাণেরর উদ্যোগ নিলে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। ইতোমধ্যে পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের পাল্টাপাল্টির পর বিবাদ গড়ায় আদালতে। এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১২০ বছর আগে চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র তত্ত্বনিধি রচিত চট্টগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থে পরীর পাহাড়ের নামাকরণ ও কাচারি ভবন স্থাপনের ইতিবৃত্ত লিখে গেছেন। পরবর্তীতে সুনীতিভূষণ কানুনগো, আবদুল হক চৌধুরী পরীর পাহাড় নিয়ে বিস্তারিত লিখে গেছেন। গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণা মতে, ১৮৯৩ সালে কাছারি স্থাপনের পরও ইংরেজরা পরীর পাহাড়ের নাম পরিবর্তন না করে ইংলিশ অনুবাদে ‘ফেয়ারী হিল’ বলে অভিহিত করত। ২০০০ সালে পরীর পাহাড়ের আদালত ভবনকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২১ বছর পরে এসে পরীর পাহাড় নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম