Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জালিয়াতি করে চাকরি নিয়ে তারাই হয়েছিলেন চক্রের নেতা


৭ এপ্রিল ২০১৮ ২২:০৬

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: তিনজন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে আসছিল একটি চক্র। পুলিশ জানায়, এই তিন কর্মকর্তাও জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছিলেন। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে জালিয়াতি চক্রের ১০ জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মহানগর পু‌লিশের (ডিএম‌পি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।

আটক এই তিন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন, পূবালী ব্যাংকের মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, সোনালী ব্যাংকের অসীম কুমার দাস এবং কৃষি ব্যাংকের সোহেল আকন্দ। এদের সঙ্গে আরও আটক করা হয়েছে, জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্ণব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহীন। ব্যাংক কর্মকর্তা তিনজন ছাড়া বাকিদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, ওই তিন ব্যাংক কর্মকর্তা সম্প্রতি জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারপর এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত হন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক (এডি) আবু জাফর মজুমদার এ চক্রের অন্যতম সদস্য। চক্র‌টির মূলহোতা পুলকেশ দাস। তিনি নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় দেন। কিন্তু জালিয়াতিই তার একমাত্র পেশা। সে তার বিশ্বস্ত সহযোগী কার্জনের সহযোগিতায় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সংগ্রহ করেন। এদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

জালিয়াতির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে আব্দুল বাতেন আরও জানান, বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ ক‌রতো এই চক্র। এদের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও রয়েছে। এদের কেউ ডিভাইস তৈরি করেন, কেউ টা‌র্গেট ক‌রে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করেন, কেউ প্রশ্ন সমাধান করেন। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সাধারণত শুক্রবারে হয়। তাই পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় আসতেন এবং পান্থপথে একটি রুমে বৈঠক করতেন। পরীক্ষার দিন ওই রুম থেকেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করা হতো।

জালিয়াতিতে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস

জালিয়াতিতে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সম্পর্কে ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস তারা তৈরি করে। এতে সিমকার্ড প্রবেশ করানো যায় এবং কল রিসিভ করা যায়। তবে ওই ডিভাইস থেকে কল করা যায় না। পরীক্ষার আগে যেসব পরীক্ষার্থী চুক্তিবদ্ধ হতো তাদের এই ডিভাইস সরবরাহ করত চক্রটি। এর সঙ্গে ছোট একটি ইয়ারফোন যুক্ত করা যায়। চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর বাইরে থেকে চক্রের সদস্যরা কল ক‌রে প্রশ্নের সমাধানগুলো বলতে থাকে এবং পরীক্ষার্থীরা ইয়ারফোনের মাধ্যমে শুনে উত্তর লিখতে থাকেন।’

এই চক্র প্রশ্নপত্র কীভাবে পেতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক ছাত্র আছে যাদের পরীক্ষা দেওয়ার বয়স আছে, কিন্তু ছাত্র ভালো না। তাদের মধ্য থেকে একজনকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হলে প্রবেশ করানো হতো। তাদের দায়িত্ব ছিল ডিভাইসের মাধ্যমে বা যে কোনোভাবে প্রশ্নপত্র বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া। প্রশ্ন পাওয়ার পর কয়েকজন মিলে এর সমাধান করত। এরপর কয়েকজন মিলে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের সেই উত্তর সরবরাহ করত। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিটি চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থে‌কে তিন লাখ টাকা করে ‌নেওয়া হ‌তো।’

সারাবাংলা/এসআর/এমআই/এটি

ডিজিটাল জালিয়াতি প্রশ্নপত্র ফাঁস ভর্তি পরীক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর