এমপিদের জন্য অবসরকালীন সুবিধার দাবি জি এম কাদেরের
২৮ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৫
ঢাকা: সংসদ সদস্য হিসেবে যারা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, সরকারির চাকরি থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় অবসরে যেতে হয়। এরপর সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা আছে। এই সংসদে এমনও সংসদ সদস্য আছের যারা ১৫/২০/২৫ বছর পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও সুযোগ-সুবিধা পান যতক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নির্বাচিত হতে না পারলে তাদের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। সৎভাবে জীবনযাপন করলে অবসরে যাওয়ার পর তাদের অনেককে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। জনপ্রতিনিধি যারা ১৫/২০ বছর বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে অবসরকালীন কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায় কি না, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, গণপরিবহনের ভাড়া, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা নিয়েও বক্তব্য রাখেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, গত ৩ নভেম্বর বিপিসি এক আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা জ্বালানিকে একটি কৌশলগত পণ্য বলে থাকেন। কারণ জ্বালানির দাম বাড়লে এর প্রভাব সরাসরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সব ধরনের সেবার দামের ওপর পড়ে। আর পরিকল্পনাহীন মূল্য বৃদ্ধি অনেক সময় বিকাশমান অর্থনীতিকে স্থবির করে দেয়।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে বলে বিপিসি লোকসান কমাতে দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের ব্যবসা থেকে গত ছয় বছরে সরকার আয় করেছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তেল বিক্রি করে লাভ করেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তেল আমদানির ভ্যাট, ট্যাক্স, বিভিন্ন শুল্ক ও আবগারি কর বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ানোর খুব বেশি প্রয়োজন ছিল কি?
পরিবহন খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলে জি এম কাদের বলেন, পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ আসলে কে করছে? সরকার নাকি মালিক ও শ্রমিক সমিতি? পরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কে কাজ করছে? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা কি এ খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছেন? অনেকেই এ অভিযোগ করেন। আশা করি জনগণের সরকার জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সংবিধানের বিভিন্ন ধারা উদ্ধৃতি দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধানের প্রথম ভাগে বলা হয়েছে— প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অর্থ ইসলামি রাষ্ট্র নয়। তাছাড়া, ২ক-এর দ্বিতীয় অংশে অন্য সব ধর্ম পালনে রাষ্ট্রকে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ফলে কোনো ধর্মাবলম্বীদের জন্য বৈষম্যের অবকাশ রাখা হয়নি। তাই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানি না— এ কথার অর্থ সংবিধান মানি না বা সমর্থন করি না।
তিনি বলেন, অথচ তৃতীয় তফসিলে (১৪৮ অনুচ্ছেদ) শপথ ও ঘোষণা সম্পর্কে বলা আছে— প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ক্ষমতা নেওয়ার আগে ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব’ বলে শপথ নেবেন। ফলে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যারা বলেছেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানি না, তারা শপথভঙ্গের দায়ে দোষী, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর