চশমা খালে নিখোঁজ কামালের লাশ ভেসে উঠল মির্জা খালে
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর চশমা খালে তলিয়ে গিয়েছিল ১০ বছরের শিশু কামাল। তলিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর পাওয়া গেল গেল তার মরদেহ। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মির্জা খালে ভেসে উঠেছে শিশু কামালের মরদেহ।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের পেছনে মির্জা খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর ষোলশহরে চশমা খালে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী শিশু মো. কামাল। ভবঘুরে আচরণের আলী কাউসারের ছেলে কামাল ষোলশহর রেলস্টেশনে ভাসমানভাবে থাকত। সোমবার সন্ধ্যায় আলী কাউসার ঘটনা জেনে নিজেই খালে ও সংলগ্ন নালায় ময়লা-আবর্জনার ভেতর খোঁজাখুঁজি করেন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তল্লাশি অভিযানে যোগ দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রামে এবার খালে তলিয়ে গেল শিশু
তবে তল্লাশিতে কামালের খোঁজ মেলেনি জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আরাফাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মির্জা খালে লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। তারা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। শিশুর লাশ দেখে আমাদের ধারণা হয়েছিল, সেটি কামালের লাশ হতে পারে। আমরা তার বাবা ও একইসঙ্গে খালে ভেসে গিয়েও বেঁচে যাওয়া কামালের বন্ধু রাকিবকে ডেকে আনি। তারা লাশটি কামালের বলে শনাক্ত করে। লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।’
ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় শুলকবহর ওয়ার্ডের সহকারী পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার মো. শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন প্রথম দেখতে পায়, উপুড় হয়ে একটি লাশ খালে ভাসছে। শুধু পিঠ দেখা যাচ্ছিল। তারা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমরাও ঘটনাস্থলে আসি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। লাশ পচে ফুলে গেছে। ষোলশহরে চশমা খালে যেখানে শিশুটি পড়ে গিয়েছিল, তার থেকে মির্জা খালে যেখানে লাশ পাওয়া গেছে এর দূরত্ব প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার হবে।’
সন্তানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামালের বাবা আবু কাউসার। লাশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের হাতে পোশাক দেখেই তিনি নিশ্চিত করেন, সেগুলো তার ছেলের পরনে ছিল। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে ‘বাবা, বাবা’ বলে বিলাপ করতে থাকে। বলতে থাকেন, আমার বাবাটা আর নেই, আর নেই।
কামালের বন্ধু রাকিবের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে তারা চশমা খালে বোতল কুড়াতে নেমেছিল। এসময় বৃষ্টি হচ্ছিল এবং খালে পানি বেশি ছিল। ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে দক্ষিণ দিকে চশমা খালে সাঁতার কেটে যাওয়ার সময় তারা ফোম জাতীয় একটি বস্তু পায়। সেটি নিয়ে খেলতে খেলতে তারা এগিয়ে যাচ্ছিল। রেলস্টেশনের কাছে যেখানে খালের সঙ্গে নালা মিশেছে, সেখানে স্রোত বেশি ছিল। স্রোতের টানে কামাল তলিয়ে যায়। লোহার একটি খুঁটির সঙ্গে আটকে যাওয়ায় রাকিব উঠে আসতে সক্ষম হয়।
তবে কামালের তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুরুতে সে কাউকে জানায়নি ভয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই এলাকায় কামালের বাবা আলী কাউসারকে দেখে সে ঘটনা জানায়। আলী কাউসার রাত পর্যন্ত নিজে নিজে খালে ও সংলগ্ন নালায় খোঁজাখুঁজি করেন। কামাল ও রাকিবকে ইলেকট্রিক্যাল কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া এনজিও কোডেকের এক কর্মকর্তা ঘটনা জানতে পেরে পরদিন ফায়ার সার্ভিসকে জানায়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয়।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তল্লাশি শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিটের সদস্যরা। এরপর ডুবুরি দলের সদস্যরাও যোগ দেন। বুধবার থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও খাল-নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ শুরু করেন।
আরও পড়ুন-
- চট্টগ্রামে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিখোঁজ
- চট্টগ্রামে জলজটে ভোগান্তি, নালায় পড়ে নিখোঁজ বৃদ্ধ
- ২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি খোঁজ, বাবার ‘লাশের’ অপেক্ষায় ছেলে
- এক টন আবর্জনা সরিয়ে ৭০ ফুট গভীর থেকে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম নগরীতে একই ধরনের আরও দু’টি ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। গত ২৫ আগস্ট সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে সড়ক ও ফুটপাতের সঙ্গে লাগোয়া একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হন প্রায় ৫৫ বছর বয়সী সালেহ আহমদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আটকে থাকা বৃষ্টির পানিতে নালা ও ফুটপাত একাকার হয়ে যায়। নালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে যান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল স্রোতে ভেসে যান পেশায় সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমদ। ঘটনার সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ মেলেনি।
ওই ঘটনার এক মাস পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে জেক্স মার্কেটের সামনে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯) নামে এক তরুণী। ফায়ার সার্ভিস তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭০ ফুট দূরে নালার ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। সেহেরীন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
উভয় ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা একে অন্যকে দায়ী করে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন-
- জলজট ও প্রাণহানি: খালে সিডিএর বাঁধকে দূষছে চসিক
- নাবিকের অসতর্কতায় জাহাজ ডুবলে সে দোষ সমুদ্রের নয়
- নালায় পড়ে নিখোঁজের দায় সিডিএর, চসিকও ‘দায়মুক্ত নয়’
- নালায় পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু: সিডিএর ঘাড়ে দায় চাপালেন মেয়র
- খোঁজ মেলেনি ৩ দিনেও, নালায় আবর্জনায় আটকে থাকার ধারণা
- চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে মৃত্যু: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ
সারাবাংলা/আরডি/টিআর