সন্তানকে স্কুলে না পাঠালেই জেল
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫৯
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে মাস্ক পরানো কিংবা নমুনা পরীক্ষার জটিলতায় যেতে চান না অনেক অভিভাবকই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে গ্রিস সরকার। বলা হয়েছে, সন্তানকে স্কুলে না পাঠালে দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে অভিভাবককে। শুধু তাই নয়, দিতে হবে জরিমানাও।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গ্রিসে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সীদের স্কুলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক দীর্ঘ দিন ধরেন। তবে স্কুলে ভর্তি না করার জন্য ৬৭ মার্কিন ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এখন অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানকে স্কুলে না পাঠানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই কঠোর সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে গ্রিক সরকার।
গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের মহাসচিব আলেকজান্দ্রোস কপ্টসিস বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে দূরে রাখবেন— এ ধরনের কোনো ঘটনা আমরা সহ্য করব না। সন্তানকে স্কুলে না পাঠানোর জন্য তারা এমন কিছু কারণের কথা বলছেন, যেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন— কেউ কেউ সন্তানকে মাস্ক পরাতে চান না বলে স্কুলে পাঠাতে চান না। এটি মেনে নেওয়ার মতো নয়।
এই প্রবণতা ঠেকাতেই গত মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) গ্রিসের দণ্ডবিধিতে সংশোধনী এনেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কপ্টসিস বলছেন, আমরা কঠোর হয়েছি। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী সন্তানকে স্কুলে না পাঠালে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে সন্তানকে মা-বাবার হেফাজত থেকে বের করেও নিতে পারবে।
গ্রিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা, অভিভাবকদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কর্তৃত্ব তারা নিজেরা রাখবে না। বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের হাতে আইনি ক্ষমতা দেওয়া হবে। কপ্টসিস বলেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণ একটি নির্দেশনা দিয়ে দেবো। এরপর প্রতিষ্ঠান প্রধানরা আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষকে ডেকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।
গ্রিসে শিশুদের স্কুলে না পাঠানোর এই সমস্যার সূত্রপাত গত শিক্ষাবর্ষ থেকে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত করে পাঠদান করা হয়েছে। তবে অক্টোবর মাসেই ঘোষণা করা হয় লকডাউন। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ ছিল। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস করানো হয়েছে।
এরপর থেকে মাস্ক পরে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়। সপ্তাহে নিজে নিজে দুইটি মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এই সময়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যেতে থাকে। স্থানীয় এক জন স্কুলশিক্ষক প্রোড্রোমস ফোটাকিডিস জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তার ক্লাসে অন্তত তিন জন শিক্ষার্থী আর ফিরে আসেনি। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাকে জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি কার্যকর নয় কোনোভাবেই।
গ্রিসের বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ক্লাসের অর্ধেকের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১০ দিনের জন্য ক্লাস বন্ধ রাখতে হবে। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতি ১০ হাজার শ্রেণিকক্ষে এমন বন্ধ থাকা শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা দুইটি। আর দেশটিতে প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে এক জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
গ্রিসে এখন পর্যন্ত ৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে এই হার ৬৬ শতাংশ। গ্রিস সেই হার অতিক্রমের চেষ্টা করছে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ১৪ বছর ও তার বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের অর্ধেককে এখন পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই চার থেকে ১১ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে শুরু শুক্রবার।
সারাবাংলা/টিআর