Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘উন্নত দেশ গড়ার সৈনিকরা প্রস্তুত, এখন আর দুঃচিন্তা নেই’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:২২

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার এখন আর কোনো দুঃচিন্তা নেই। আমার দেশটা যেভাবে প্রযুক্তি শিক্ষায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ করতে চাই, জনসংখ্যাকে জ্ঞানভিত্তিক করতে চাই, সেটির পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০৪১ সালের যে উন্নত বাংলাদেশ হবে, সেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিকরা তৈরি হচ্ছে; এটিই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২১ উদযাপন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে প্রযুক্তি যাত্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই সূচনা হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে আধুনিক হয়, বিজ্ঞানসম্মত হয় সে ব্যাপারে তার সময়েই শিক্ষা কমিশন গঠন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর দেশের অগ্রযাত্রা অগ্রগতি থমকে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন পেয়ে জোর করে দেশে ফিরে আসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর যখন আমরা সরকারে আসি, তখন কোথায় ছিলাম? বাংলাদেশে তখন কোনো ইন্টারনেট সার্ভিস সে রকম ব্যবহার ছিল না, কম্পিউটার ব্যবহার হত না, মোবাইল ফোন খুব সীমিত আকারে মাত্র একটা ব্যক্তির ব্যবসা ছিল, ফলে সীমিত আকারে ব্যবহার হত। সমস্ত টেলিফোনগুলি এনালগ ছিল ডিজিটাল ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সত্যিকথা বলতে কি এই পরামর্শগুলো আমাকে দিয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়। সে স্কুল জীবন থেকেই কম্পিউটার শিখত, ঢাকায় এসে আমাকেও শিখাত, আমি শিখতাম। কারণ স্কুল থেকে যখন আসত তখন তার কম্পিউটারটা সঙ্গে করে নিয়ে আসত। সেইভাবে ওর মাধ্যমেই কম্পিউটার সেভাবে তার পরামর্শ ছিল আমাদের দেশের মানুষ কম্পিউটার শিক্ষা দিতে হবে।’

এই আলোচনাগুলো ১৯৯১ সালের কথা বলছি। ৯০/৯১ সালে যখন সে আসত… তখন থেকেই আলোচনা ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর আমরা কতকগুলো পদক্ষেপ নিই বলেন তিনি।

পাশাপাশি তার সরকারের মেয়াদে প্রযুক্তি শিক্ষা প্রযুক্তির উপর ট্যাক্স কমানোসহ নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা উদ্যোগ নিলাম। আর সেই সময় আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারেই ঘোষণা দেই বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। হ্যাঁ, এই ঘোষণাটা দেওয়ার পরে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে এটি ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা উন্নত করব, তার জন্য একটা সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য স্থির আমরা না করি তাহলে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব। তাই আমরা আমাদের রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে নানামুখী অন্যায়-অবিচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। সেই সময় দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সারাদেশে বোমা হামলা, স্কুল-কলেজে সন্ত্রাস, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ জেলায় জেলায় বোমা হামলার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের এই দুঃশাসন লুটপাট, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়, বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়;এই কারণে দেশে এমাজেন্সি আসে তখন সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হয়। আমি যখন বন্দিখানায় ছিলাম, সাবজেলে আটকে রাখে তখন আমি বসে বসে চিন্তা করি যে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে কী করা যাবে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই সময় আমি কিছু পয়েন্ট লিখে রাখি। যেটি কাজে লাগে ২০০৮’এ যখন আমরা নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুত করি তখন।’ একটা সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে আমরা কাজ করেছি বলেই আজকে এই উন্নয়নটা করতে পেরেছি বলে মনে করেন তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ নাগরিক সৃষ্টি এটিই ছিল আমাদের লক্ষ্য। কারণ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে এটি হতে পারে না। সেটি আমরা হতে দেব না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ ব্যবস্থাটা নেই। আজকে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রূপকল্প-২০২১’যে লক্ষ্যগুলো ছিল সে লক্ষ্যটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে হবে। আর সেই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম তাদেরকেও প্রস্তুতি নিতে হবে।

‘সত্যি কথা বলতে কি, আমি খুব আনন্দিত যে, আজকে যখন আমরা পুরস্কারগুলো দিলাম, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু আমাদের যেমন উদ্যোগ আছে আর আমাদের দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও কিন্তু তাদের উদ্ভাবণী শক্তি দিয়ে অনেক কিছু তারা আজকে তৈরি করছে। বাংলাদেশের জনগণ সেই সেবাটা পাবে, পাচ্ছে এবং তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ হচ্ছে।’

‘আর এই যে আমাদের ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে তাদের যে মেধা তাদের যে মনন সেটিও বিকশিত হওয়ার সুযোগ, এটিও এই ডিজিটাল বাংলাদেশ না করলে এটা বোধহয় কখনো সম্ভব হতো না বা তাদের ভেতরে এই যে মেধাটা রয়ে গেছে, সেটা বের করে নিয়ে আসা এবং সেটা দেশের কাজে লাগানো; এটিই ছিল সব থেকে বড় লক্ষ্য।’

আমি মনে করি সেখান থেকে আমরা অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। কাজেই যারা পুরস্কার পেয়েছে, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং বিশেষ করে ছোট শিশুদের। সেটা দেখে আমার মনটা ভরে গেল এই জন্য আমি তো ২০৪১ সালের বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে তাহলে কাদের দিয়ে বাংলাদেশ হবে, আজকে এই পুরস্কার দেওয়ার মধ্য থেকে আমাদের অনেক নতুন প্রজন্ম তারা যে পুরস্কার পেল এবং তাদের যে মেধা বিকাশের সুযোগ হল, আমার এখন আর কোনো দুঃচিন্তা নাই’ বলে আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

তিনি বলেন, ‘আজকে থেকে বলতে পারি, আর কোন দুঃচিন্তা নাই। আমাদের দেশটা যেভাবে প্রযুক্তি শিক্ষায় জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ করতে চাই, আমাদের জনসংখ্যাকে জ্ঞানভিত্তিক করতে চাই, আজকে সেটার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই বাংলাদেশ যে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ, সেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে, এটিই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা।’

কী কী করেছি সেটা আর বলতে চাই না। ঘরে বসেই সারাদেশে মানুষ উপার্জন করতে পাচ্ছে। সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসে সব সেবা নিতে পারছে। শুধু দেশের মানুষ কেন আজকে যারা বিদেশে বসবাস করে তাদেরও সুযোগ হয়েছে, এখানে যদি বাড়িঘর রেখে যায়, সেটা তারা দেখতে পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কিছুদিন আগে ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে চুরির ঘটনার বিদেশে বসে বাসার মালিক সিসিটিভি ফুটেজে চুরির ঘটনা দেখার কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার শুভফলটা প্রবাসীরাও পাচ্ছে। আর আমাদের দেশের মানুষ তো পাচ্চেই। আমাদের এটাই লক্ষ্য ছিল নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, ঘরে বসেও আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং তারা সে মেধা দিয়েই নিজের জীবনের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে আসবে, নিজের জীবনকে গড়ে তুলবে। সেই সাথে সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিক আমাদের তৈরি হচ্ছে।’

এজন্য সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকসহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রযুক্তির সেবার আমরা যেভাবে মানুষের সেবাটা দিতে চেয়েছিলাম আজকে কিন্তু মোটামুটি সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। এখন আমরা গার্মেন্টস রফতানি করি, সব থেকে বড় রপ্তানি আয় হয়। সেখানে একটা সুনির্দিষ্ট স্থির করা হয়েছে। আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন আর রফতানি। সেখানে মেধা বিকাশের সুযোগ হবে। আর এই ডিজিটাল পদ্ধতিতেই আমার মনে হয় যে এটা সকল খাতকেই ছাড়িয়ে যাবে। এই ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করে। তার জন্য একটা সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যেভাবে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে কেউও কিন্তু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি তরুণ সমাজ এবং শিশু কিশোর তাদেরকে আমরা যতবেশি প্রশিক্ষণ দিতে পারব। তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করাতে পারব, তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারব, ততই বেশি আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবে। এরাই হবে আমাদের সোনার ছেলে। জাতির পিতা যে সোনার ছেলেমেয়ে চেয়েছিলেন, আমাদের সোনার সন্তান,তারাই আমাদের দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর