পাবনা: পাবনা জেলার বেড়া থানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নামে অভিযান চালানো তিন প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ। তিনটি মিষ্টি ও খাবারের দোকানে অভিযানের নামে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের নামে। পুলিশ তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে বেড়া থানা পুলিশ।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বেড়া বাজার এলাকায় এই তিন ব্যক্তি অভিযানের নামে প্রতারণা করতে আসেন। এসময় কথিত অভিযান চালানো দোকানগুলোর মালিকদের তাদের আচরণ নিয়ে সন্দেহ হলে থানায় খবর দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী দোকান মালিকরা জানান, দুপুর ১টার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা পরিচয়ে তিন ব্যক্তি তাদের দোকানে আসেন। এরপর প্রথমে গোধূলী সুইটস অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করেন তারা। দোকানটিকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তারা যায় শাপলা শালুক ফুড প্যালেসে। সেই দোকানটিকে জরিমানা করা হয় ১৫ হাজার টাকা। এরপর বনলতা সুইটসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
যে তিন জন কথিত এই অভিযানে এসেছিলেন, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মো. আবির হোসেন মীম। তিনি নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এবং একইসঙ্গে অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। এই পরিচয়ের একটি ভিজিটিং কার্ডও তিনি দোকান মালিকদের দেন। সেই কার্ডে আবার ইমেইল ঠিকানায় লেখা রয়েছে— ডিসি কুষ্টিয়া! পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার এই নাম-পরিচয় ভুয়া।
আটক তিন জন হলেন— বগুড়া জেলার গাবতলী থানার তেলকুপি গ্রামের মৃত কবির উদ্দিনের ছেলে মো. আমির হেসেন মিরু (২৯), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর মহল্লার মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান (১৭) এবং একই উপজেলার শের খালি গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে আজিজুল ইসলাম (২৩)।
গোধূলী গোধূলী সুইটস অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মেহেদী হাসান সিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, তারা তিন জন এসেই নিজেদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। তারা কিচেন রুমসহ গোটা রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তুচ্ছ বিভিন্ন বিষয়কে কারণ দেখিয়ে তারা ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আমাদের। অনুরোধ করলে তারা ৫ হাজার টাকা কমিয়ে রাখেন।
শাপলা শালুক ফুড প্যালেসের স্বত্বাধিকারী হাসিবুর রহমান শাপলা সারাবাংলাকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা পরিচয়ে তিন ব্যক্তি এসে আমাদের রেস্টুরেন্টকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আমাদের নতুন রেস্টুরেন্ট। আমরা সবকিছু মানসম্মত রাখার চেষ্টাই সবসময় করে থাকি। তারপরও উনারা বিভিন্ন কথা বলে আমাদের জরিমানা করেন। কিন্তু তাদের আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। পরিচয় জানিয়ে যে ভিজিটিং কার্ড দেওয়া হয়েছিল, সেটিও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনে হয়নি। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিই।
গোধূলী রেস্টুরেন্টের মেহেদীও জানান একই কথা। তিনি বলেন, উনারা জরিমানার টাকা নেওয়ার সময় আমাদের সাদা কাগজের এক ধরনের মেমো দেন। ওই মেমোর কোনো অংশ তাদের কাছে ছিল না। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো টাকা নেওয়া হলে তো সাধারণত মুড়ি বইয়ের একটি অংশ সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়। উনাদের কথাবার্তাও ছিল অসংলগ্ন। সব মিলিয়ে আমাদের সন্দেহ হয় যে উনারা হয়তো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রকৃত কর্মকর্তা নন।
এই সন্দেহ থেকেই ভোক্তা অধিকারের কথিত তিন কর্মকর্তাকে দোকানে রেখেই দোকান মালিকরা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বুঝতে পারেন, তারা ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এসেছেন। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পাবনার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে মো. আবির হোসেন মীম নামে এক ব্যক্তি আরও দু’জনকে নিয়ে কথিত অভিযান চালাতে এসেছিলেন। দোকান মালিকদের সন্দেহ হলে আমাদের ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দেন। আমরা গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ধারণা করছি, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এই কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
ওসি অরবিন্দ সরকার আরও বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পাবনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এই তিন ব্যক্তি যে তাদের কেউ নন, সেটি তারা এসে নিশ্চিত করেছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছে।