লঞ্চে আগুন: নানীর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে, ফেরার পথে হারালেন মেয়েকে
২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:০৩
ঢাকা: সপ্তাহ দুয়েক আগে মারা গেছেন নানী। সে খবর পেয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জের বাড়িতে এসেছিলেন জিয়াসমিন আক্তার (২৮)। গত রাতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে করে ফিরছিলেন বরগুনা। সেই লঞ্চের আগুনে ঝলসে গেছেন দুই সন্তানসহ জিয়াসমিন। এর মধ্যে ঢাকায় আসার পথে প্রাণ হারিয়েছে জিয়াসমিনের মেয়ে মাহিনুর (৬)।
নানীকে হারানোর শোক। এর মধ্যেই প্রাণ হারাল আদরের ছোট মেয়ে। নিজে দগ্ধ। দগ্ধ ছেলেও। সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থা জিয়াসমিনের। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শারীরিক আর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে কাতরানোর মতো অবস্থাতেও নেই তিনি। রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয় জিয়াসমিন, তার ছেলে তামিম হাসান (৮) ও মেয়ে মাহিনুরকে। কিন্তু পথেই প্রাণ হারিয়েছে শিশু মাহিনুর।
আরও পড়ুন-
- লঞ্চে আগুন: আরও ২ তদন্ত কমিটি
- লঞ্চে আগুন: ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি
- লঞ্চে ভয়াবহ আগুন: প্রাণহানি বেড়ে ৩৯
- লঞ্চে ভয়াবহ আগুন, ১৬ জনের লাশ উদ্ধার
- লঞ্চে দগ্ধদের চিকিৎসায় ঘাটতি হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- সুগন্ধার বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ, তীরে স্বজনদের ভিড়
- লঞ্চে আগুন: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর শোক, যাচ্ছেন ঝালকাঠি
- ঘুম ভেঙে কয়েকশ যাত্রী দেখলেন— মরতে হবে ডুবে, নয়তো আগুনে
আরও এক পরিবারের চার সদস্যকেও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন— বাচ্চু মিয়া (৫১), তার স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৪৫), মেয়ে ইশরাত জাহান সাদিয়া (২২) ও ছেলে সাইফুলালাহ মানসুর সাদিকুর (১৬)। তাদের সবার অবস্থাই সংকটাপন্ন।
জিয়াসমিনের স্বজনরা জানিয়েছেন, স্বামী খলিলুল্লাহ ও দুই সন্তান নিয়ে বরগুনা সদরে থাকেন জিয়াসমিন। তার বাবার বাড়ি ঢাকার কেরাণীগঞ্জের শুভাড্যা এলাকায়। ১২ দিন আগে জিয়াসমিনের নানী মারা যান। এ খবর পেয়ে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জে এসেছিলেন জিয়াসমিন। খলিলুল্লাহ কয়েকদিন আগেই চলে গেছেন। গত রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে করে জিয়াসমিন দুই সন্তানকে নিয়ে বরগুনা ফিরছিলেন।
জিয়াসমিনের মামা মো. মামুন হোসেন চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, আমার ভাগ্নিটা দুই বাচ্চা নিয়ে বরগুনা যাচ্ছিল। কে জানত, ওই লঞ্চে তাদের এমন দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে।
মামুন হোসেন জানান, দগ্ধ অবস্থায় তাদের তিন জনকেই প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছিল। পথে মাওয়া ঘাটে মারা গেছে মাহিনুর। তার মরদেহ শুভাড্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাচ্চু মিয়ার এক জন স্বজন শাখাওয়াত হোসেন সারাবাংলাকে জানান, বাচ্চু মিয়া পরিবার নিয়ে কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায়। গত রাতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য তারা ওই লঞ্চে ওঠেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এ পর্যন্ত ছয় জনকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে জিয়াসমিনের শরীরের ১২ শতাংশ ও তার ছেলে তামিমের শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ। অন্যদিকে বাচ্চু মিয়ার শরীরের ৪ শতাংশ, শাহিনুরের ২৫ শতাংশ ও ইশরাতের ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সামান্য দগ্ধ সাদিকুরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দিতে ইনস্টিটিউট প্রস্তুত আছে। এছাড়া বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে পাঁচ জন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে দু’জন চিকিৎসককে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা দগ্ধদের চিকিৎসা দিতে পাঠানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর
এমভি অভিযান-১০ টপ নিউজ বার্ন ইনস্টিটিউট লঞ্চে আগুন লঞ্চের আগুনে দগ্ধ