Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিফিলিস বেড়েছে, এইচআইভি বেড়েছে সমকামী-ট্রান্সজেন্ডারদের মাঝে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৩৩

ঢাকা: দেশে পুরুষ সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়েছে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তের হার। এছাড়া দেশে সিফিলিসের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও এ বছরের গবেষণায় সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

১২টি জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ চারটি জনগোষ্ঠীর ওপরে এইচআইভি ভাইরাসের ঝুঁকি নির্ণয়ে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে নারী যৌনকর্মী, পুরুষ সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার ও ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের শিরায় মাদক গ্রহণকারী— এই চার জনগোষ্ঠীর ৯ হাজার মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

জরিপটি পরিচালনা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগ। গত তিন বছরে পুরুষ সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে এইচআইভির হার বৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিএসএমএমইউ ভাইরোলজি বিভাগের অধীনে পরিচালিত এ জরিপের শিরোনাম ‘এইচআইভি ভাইরাসের ইন্টিগ্রেটেড বায়ো বিহেভিয়ারেল সার্ভিল্যান্স’। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিএসএমএমইউ’র এ ব্লকের অডিটোরিয়ামে জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়। জরিপ দলের প্রধান ছিলেন বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।

জরিপে যে ৯ হাজার ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাদের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেওয়া জনগোষ্ঠী ৩ হাজার ৮০ জন, নারী যৌনকর্মী ৩ হাজার ১১ জন, পুরুষ সমকামী ২ হাজার ৭৮ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ১ হাজার ৭২ জন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

জরিপের ফল প্রকাশ করে জানানো হয়, দেশে ২০১৭ সালে পুরুষ সমকামীদের এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশে। একইসঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে ২০১৭ সালে এইচআইভি আক্রান্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

নারী যৌনকর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে গত জরিপের তুলনায় এইচআইভি আক্রান্তের হার কমেছে বলে জানানো হয় জরিপে। এতে জানানো হয়, জরিপ চালানো চার জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগের তুলনায় সক্রিয় সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত ২০১৭ সালে এ হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও তা বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ঊর্ধ্বমুখী এই হারকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ডা. সাইফ মুন্সী বলেন, আমরা আগের জরিপগুলোতে দেখেছি, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল। তবে এই জরিপে বিপরীত প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। জরিপের ফলাফল বলছে, নারী যৌনকর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে গত জরিপের তুলনায় এইচআইভি আক্রান্তের হার কমেছে।

তিনি আরও বলেন, এইচআইভি ছাড়াও হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি রোগের ওপরেও জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এখনো হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

ডা. সাইফ মুন্সী বলেন, উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের এইচআইভি ভাইরাস রুখতে যেসব কর্মসূচি চলমান রয়েছে, এগুলো আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এগুলো আরও বেগবান করতে হবে।

বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং ট্রান্সজেন্ডার— এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি বা এইডসের ঝুঁকি বা যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে এই রোগ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। স্বাভাবিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ যাতে না ছড়ায়, সেদিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, শারীরিক সম্পর্ক, সিরিঞ্জের মাধ্যমে এবং মা থেকে সন্তানে— এই তিনভাবে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। আমাদের দেশে রক্তদান এবং সিরিঞ্জের মাধ্যমে ছড়াত বেশি। ব্লাড ট্রান্সমিশনে কোনো পরীক্ষা করা হতো না। এখন সেটি করা হচ্ছে, ইঞ্জেকশনের বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। কাঁচের সিরিঞ্জের পরিবর্তে

নিষ্পত্তিযোগ্য (ডিসপোজেবল, একবার ব্যবহারের জন্য) সিরিঞ্জ ব্যবহার হচ্ছে। তবে সিরিঞ্জে মাদক গ্রহণে এইচআইভি সংক্রমণ এখনো অনেক বেশি। এতে এইচআইভিতে যদি ৬ শতাংশে আক্রান্ত হয়, তবে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয় ৬০ শতাংশ। কারণ হেপাটাইটিস অনেক বেশি সংক্রামক।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

এইচআইভি এইডস বিএসএমএমইউ সিফিলিস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর