ভয়ে ভীত হয়ে বিএনপির সমাবেশে গুলি
২ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৩৪
ঢাকা: বিএনপির সমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে ভয়ে ভীত হয়ে পুলিশ দিয়ে গুলি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিদায়ী বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষের বিষয়টি তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা জানেন- গত এক মাসের অধিক সময় ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আমাদের এই যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি, এতে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ এবং অনির্বাচতি সরকার আক্রমণের পর আক্রমণ করেছে।’
‘আমরা একটা প্রত্যয় জন্মেছে, বিশ্বাস জন্মেছে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, এই দেশের জনগণ চায় না এই অনির্বাচিত সরকার আর ক্ষমতায় থাকুক, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করুক। এটাও প্রমাণ হয়েছে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি জনগণ এই মুহূর্তেই চায় এবং তার চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে তাকে বিদেশে প্রেরণ করতে চায়’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের। এই অনির্বাচিত সরকার আজকে পুরোপুরিভাবে এই দাবিকে এড়িয়ে গিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার যে নীল নকশা সেটাকেই তারা বাস্তবায়ন করতে চায়। সেই জন্য অতীতের মতোই নির্যাতন, নিপীড়ন, খুন, গুম, গুলি বর্ষণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে তারা ব্যহত করতে চায়। কিন্তু আমরা এ কথা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে এবং বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের দাবি আদায় করবে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবে এবং তাকে বিদেশে প্রেরণে সরকারকে বাধ্য করবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সমাবেশে আপনারা দেখেছেন পত্রিকাগুলোতে এসেছে যে, অস্ত্রগুলো অবৈধ। একটা ছবি দেখলাম ইম্প্রোর্টেড, চক চক করছে নতুন রিভলবার। দেশি নয়, বিদেশি রিভলবার। এই যে দেশের মধ্যে অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে এসে গেছে– এটা শুভ লক্ষণ নয়।’
‘এই অস্ত্রধারীরা হলো সিরাজগঞ্জের মধ্যপাড়ার বায়েজিদ, দত্তবাড়ীর সুজয়, কোল গয়লার সুমন ও জনি। তারা চারটি পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা চালায়, যা পত্রিকায় ও মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুব লীগের সদস্য। অথচ এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। সন্ত্রাস করল তারা, আবার বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে অস্ত্রধারীর গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি’– বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা তিন দিন আগে প্রশাসনকে জানালাম অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে রেডি হচ্ছে–আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তারা ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি। এরপর সমাবেশের দিন মারমারি হলো, জনগণ প্রতিহত করল। এখন পর্যন্ত ৬টা মামলা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। তারমধ্যে সরকার বাদী হয়ে মামলা করেছে ৪টা এবং আওয়ামী লীগের লোকজন করেছে ২টা। গতকাল আমরা মামলা করতে গিয়েছিলাম রাত্রে বেলা। কিন্তু আমাদের মামলা নেওয়া হয়নি।’
‘যারা অস্ত্র নিয়ে সমাবেশের দিন ঘুরে বেড়াল, পত্রিকায় ছবি আসলো তাদের বিরুদ্ধে কেনো মামলা হলো না? যারা আক্রান্ত তাদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করল। এই হচ্ছে সিরাজগঞ্জের অবস্থা। ১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগ এভাবেই সারাদেশে সন্ত্রাস করেছিল, যা নতুন প্রজন্ম অনেকে জানেন না। আওয়ামী লীগ চরিত্রই হচ্ছে সস্ত্রাসী’– বলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি বলেন, ‘এটা আজকে পরিস্কার যে, বাংলাদেশেরে মানুষ এক মুহুর্ত এই সরকারকে দেখতে চায় না। যদি দেখতে চাইতো তাহলে সেদিন সিরাজগঞ্জে এতো মানুষের ঢল নামত না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস