আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন, একাংশের মিছিল
১০ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৪৯
।। স্টাফ করেপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানবন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে সেখানে আন্দোলনকারীদের একাংশ মিছিল করেন।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনয় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিনা উসকানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তা অমানবিক। অবিলম্বে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা কোটা সংস্কারের দাবি জানানোর পাশপাশি হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধন চলাকালে টিএসসির বিভিন্ন স্থানে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন কোটা সংস্কারের পক্ষের একটি অংশ। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের বিষয়ে একমত নন। অবিলম্বে কোটা সংস্কারের জন্য সরকারকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত সারাবাংলাকে বলেন, আন্দোলন স্থগিতের পক্ষে আমরা একমত নই। আমরা চাই আন্দোলন অব্যাহত থাকুক। আমরা আগামী তিনদিন টিএসসিতে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।
এদিন ১২টার সময় ফেসবুক লাইভে আসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা মেনে নিয়েছি। আমাদের আন্দোলন ৭ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করি এবং তার উপর আমাদের আস্থা আছে। এই বিষয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। প্রধানমন্ত্রী সময় নিয়েছেন কারণ তিনি এই সময়ের মধ্যে কিছুদিন দেশের বাইরে থাকবেন। আর এই সংস্কারের জন্য মন্ত্রীসভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য তিনি আমাদের কাছে ২ মাসের সময় চান, কিন্তু আমরা এক মাসের সময় দেই। আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলা হয়, কিন্তু আমরা সে দাবি মানিনি। আমরা বলেছি, আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব না, তবে সাময়িক স্থগিত করছি। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে আন্দোলন আবারও চলবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। এসময় এর যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, নুরুল হক নুর এবং সোহারাব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিষয়ে বলেন, সরকারের একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা তাকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এসময়ের জন্য তিনি তার বক্তব্য প্রত্যহার করে ক্ষমা চাইবেন। যদি তা না করেন তাহলে বিকেল ৫টার টার পরে আমরা শুধুমাত্র তার এ বক্তব্যের বিরুদ্ধ সমগ্র বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল পালন করব।
তারা আরও বলেন, একটি কুচক্রী মহল আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরাই অনুপ্রবেশকারী। কেউ এদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি অপেক্ষা করবো। এতদিন অপেক্ষা করতে পেরেছি, আরও করবো। এখন আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখছি সাময়িকভাবে। আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়নি। বন্দি সকল ভাইয়েরা এখন মুক্ত হয়েছেন।
কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা রোববার শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে পুলিশ তাদের রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।
রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভ্যাপক ভাঙচুর করা হয়। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে রাতভর। আহত হয় দেড় শতাধিক।
এদিকে ভিসির বাসায় ভাঙচুর এবং হামলার প্রতিবাদে দুপুর ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সম্মেলন থেকে ভিসির বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
ঘটনাকে নিন্দনীয় ও ইতিহাসের বর্বরতম আখ্যায়িত করেন সভাপতি অধ্যাপক আ স ম মাকসুদ কামাল। আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদদেরকে ভিসি ভবন ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী রোবাইতুল ইসলাম, অধ্যাপক কুলসম আরা বাসার, সিনেট সদস্য চন্দ্রনাথ মোকতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এমআইএস/এসআর/একে
‘হলে ফিরছি, তবে ছাত্রদের পাশে আছি’
এবার ছাত্রীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে র্যাব
কার্জন হলেও দাঁড়াতে পারলেন না আন্দোলনকারীরা
আন্দোলন দমাতে পুলিশ-ছাত্রলীগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে ভীতি-উত্তেজনা
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হল ছেড়ে রাস্তায় ঢাবি ছাত্রীরা
শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাবিতে, সংঘর্ষ চলছেই
কাঁদুনে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ শাহবাগে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কার: মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন