লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না, ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনা
৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:১৬
ঢাকা: ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন লোভের বশবর্তী হয়ে পা-পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে সেইভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। আমাদের দল গণমানুষের দল, অধিকার হারা মানুষের কথা বলেই এই সংগঠন তৈরি।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। গণভবন থেকে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তিনি। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার পর সভা শুরু হয়। পরে ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। ভার্চুয়ালি ছাত্রলীগের মাতৃভূমি পাঠাগার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রলীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছে। অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বুকের রক্ত দিয়ে গেছে, কত চেনা মুখ হারিয়ে গেছে। কাজেই সেই ঐতিহ্য নিয়েই এই সংগঠন। কেউ উর্দি পরে এসে নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবি করলো সেই সংগঠন কিন্তু ছাত্রলীগ না। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল কিন্তু ছাত্রলীগও না, আওয়ামী লীগও না বা আমাদের সহযোগী সংগঠনও না।’
আমাদের দল গণমানুষের দল, অধিকার হারা মানুষের কথা বলেই কিন্তু এই সংগঠন তৈরি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কথাটা কিন্তা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এইটাই হচ্ছে সবসময় আমাদের গর্বের বিষয়। কাজেই সেই গর্বটা থাকতে হবে কিন্তু অহমিকা না। সেখানে বিনয়ী হতে হবে আর দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে।’
‘যেটা জাতির পিতা ডেভিড ফ্রস্টের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- তার সবচেয়ে বড় শক্তি এদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা, সব থেকে দুর্বলতা তিনি অধিক ভালবাসেন।’ এটিই ঠিকই। সত্যিই তিনি অতিরিক্ত ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে। সে জন্যই তো অকালে জীবনটা দিতে হলো। কারণ এই ভালবাসা আর বিশ্বাস যাদের করেছিলেন তারাই তার বুকেগুলি চালাল, এটিই হচ্ছে দুভাগ্যের বিষয় বলে আক্ষেপ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বুলেট গোলা বোমা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি। কাজেই ও-নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম, এই গতিটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই চাই।চিন্তাটা সেখানেই, আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়।’
ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগ সকলেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার যেন কখনো ওই হায়েনার দল এসে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কাউকে দেয়া হবে না; এই কথাটাই মনে রাখতে হবে।’
‘এই কথাটা মনে রেখেই ছাত্রলীগ নিজেদেরকে সুসংগঠিত রাখবে। কারণ এই ছাত্ররাজনীতি থেকেই তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে, এটিও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই নিজেদেরকে নেতৃত্ব হিসাবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। কাজেই তোমরা সেইভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলবা। একটা আদর্শবান কর্মী হিসাবে। খেয়াল রাখব, কোন লোভের বশবর্তী হয়ে পা-পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে সেইভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কালকে খুব ভাল তোমাদের র্যালি হয়েছে, চমৎকার র্যালি করেছো তোমরা। একটু খুঁত আছে, কারো মুখে মাস্ক ছিল না। আমি ভাল করে ছবিগুলো দেখেছি, মাস্ক কেউ পরোনি। এখনো অনেকে বসে আছো মাস্ক ছাড়া। নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেটি আছে, এটি কিন্তু আরও মারাত্মক। কাজেই তোমরা যখনই এমন পাবলিক গেদারিংয়ে যাবে, সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে।’
‘তোমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং অন্যও যাতে পরে তার ব্যবস্থা নেবে। নিজে যদি সুরক্ষিত না থাকো তাহলে অন্যকে সাহায্য করবে কীভাবে? ধন্যবাদ জানাই, বলার সঙ্গে অনেকে পরেছো, এখনও অনেকে পরোনি। আগামীতে কিন্তু এটি দেখতে চাই না।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক সময় যাদের তরুণ ছাত্রনেতা দেখেছি, এখন সবার অনেকের চুলও পেকে গেছে, অনেকের বয়স দেখা যাচ্ছে, বয়সের ছবি দেখাচ্ছো তোমরা কিন্তু আমার কাছে সেই এখনো ছোট ছোটই রয়ে গেছো, এটি মনে রেখে দিও। আমি যাদের ছোট দেখেছি, তারা আমার কাছে ছোটই থাকবে।’
তোমরা বড় নেতা হও, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হও, তোমাদের উত্তরসূরি যেন আরও সুন্দরভাবে চলতে পারে পূর্বসূরি হিসাবে তোমরা তাদেরকে সেই সৎ পথে নিয়ে যাবা, সেই আশাবাদ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। সাবেকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম, অসীম কুমার উকিল, অজয় কর খোকন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, বাহাদুর বেপারী, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ বাকিরা।
সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
সারাবাংলা/এনআর/একে