ভোট শেষে ব্যালট নেওয়ার পথে বাধা, পুলিশ-বিজিবির গুলিতে নিহত ৪
৫ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৫৭
বগুড়া: বগুড়ার গাবতলীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট বাক্স কেন্দ্র থেকে উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গোলোযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে চার জন নিহত হয়েছেন। নিহত এক নারী ওই ইউপিতে একজন মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে নিহতরা হলেন— গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী (মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট) কুলসুম আক্তার, মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, মৃত ইফাত উল্লাহর ছেলে আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রাজ্জাক। নিহত চার জনই কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা। নিহত রাজ্জাকের বাবার নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
আরও পড়ুন- নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত ৭
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ওই কেন্দ্রে সৃষ্ট গোলোযোগে আমরা তিন জন নিহত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একটি লাশও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার ইউপি নির্বাচনে ভোট নেওয়া শেষে গণনা ও ফল ঘোষণা না করেই ওই কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কেন্দ্রেই ভোটগণনা করে ফল ঘোষণার দাবি জানান। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের গাড়িতে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গুলি চালায়। পরে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসলে ভোটকেন্দ্রেই ব্যালট পেপার গণনা করে ফল ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে নির্বাচনি সহিংসতায় ১ জনের মৃত্যু
ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটগণনা নিয়ে টালবাহনা করার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। তাদের হটিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন জন এবং রাজ্জাক নামে একজন গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সেখানে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা শেষে নিরাপদে উপজেলা সদরে পৌঁছেছেন।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
এর আগে, গাবতলীর রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ নিয়ে বগুড়ায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এক দিনেই প্রাণ গেল পাঁচ জনের।
এর বাইরেও পঞ্চম ধাপের এই ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার শিকার হয়ে দেশের আরও পাঁচ জেলায় আরও কমপক্ষে ছয় জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে চাঁদপুরের হাইমচর ও কচুয়ায় নির্বাচনি সহিংসতায় দুই জন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখে স্ট্রোক করে এক জন, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ধারলো অস্ত্রের আঘাতে এক জন, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় এক জন এবং চট্টগ্রামের আনোয়ার উপজেলার চাতরী ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও এক জন নিহত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে পঞ্চম ধাপের এই ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এক দিনেই ১১ জন প্রাণ হারালেন।
সারাবাংলা/টিআর
৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচন ইউপি নির্বাচন কালাইহাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র নিহত ৪ পুলিশ-বিজিবির গুলি বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন