ভয় না পেয়ে ভ্যাকসিন নিন: প্রধানমন্ত্রী
৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:১১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আপনারা ভয় না পেয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে নেন। ভ্যাকসিন নিলে অন্তত আপনার জীবনটি রক্ষা পাবে। সে জন্য সবার কাছে আমার অনুরোধ, ভয় না পেয়ে ভ্যাকসিনটা যেন ঠিকমতো নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিবেন।
রোববার (৯ জানুয়ারি) দেশের বিভাগীয় আটটি শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তসহ বিভাগীয় শহরে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
সারাবিশ্বে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রন নতুন করে আবার সারাবিশ্বে দেখা দিচ্ছে, সে জন্য আমাদের দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাটি মেনে চলতে হবে। শীতকালে প্রাদুর্ভাবটা একটু বাড়ে। এ সময়ে আমাদের দেশে একটু সর্দি-কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। বড় কোনো সমাগমে না গিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন সেটিই আমি চাইছি।’
আমাদের প্রায় ৩১ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে রেখেছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি মানুষও যেন ভ্যাকসিন ছাড়া না থাকে। সেই ক্ষেত্রে আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, অনেকেই ভয় পান, গায়ে সুঁই ফোটাবে, ভয় আছে, নানা ধরনের অপপ্রচারও ছিল। কিন্তু সবাইকে আমাদের অনুরোধ থাকবে করোনাভাইরাস এবং নতুন আবার আরেকটি ভ্যারিয়েশন দেখা গেছে (ওমিক্রন) এর হাত থেকে বাঁচার জন্য এবং শিশুদের বেশি ধরছে। সেই আমরা ১২ বছর বয়স থেকে শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থাও নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৩ কোটি ডোজ করোনার টিকা প্রদান করেছি। এর মধ্যে কিছু ডাবল ডোজও হয়ে গেছে। এখন তো আমরা বুস্টার ডোজও দেওয়া শুরু করে দিয়েছি। কারণ দেশের মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, সুস্থ থাকুক, সেটাই আমি চাই।’
আমাদের ছোট ছোট শিশু তাদেরকেও আমরা ভ্যাকসিন দেব জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নির্দেশনা বা নীতিমালা পাব। আমরাও শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করব।’
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা একান্তভাবে অপরিহার্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে খুব ভাল গবেষণা করে যাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ যারা ভাল নামিদামি চিকিৎসক হয়ে যান তারা তো চিকিৎসা সেবা দিতেই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু কিছুটা সময় যদি আপনারা ব্যয় করেন গবেষণার দিকে একটু নজর দেন, তাহলে আমাদের দেশের পরিবেশ আমাদের দেশের আবহাওয়া, আমাদের দেশের জলবায়ু, আমাদের দেশের সবকিছু মিলিয়ে এই দেশে কী কী ধরনের রোগ দেখা দেয়, তার প্রতিরোধ শক্তিটা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
করোনা সংকট চলাকালীন বিত্তশালীরা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে না পারলেও বাংলাদেশেই উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বোধহয় তাদেরও চোখ খুলে গেছে, বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ হাসপাতালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেই গড়ে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে এই ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম, সেই জন্যই আজকে এটি সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনশক্তি গড়ে উঠুক। আর এই অতিমারি এটিকে যে কোনোভাবেই হোক মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য আমাদের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন একটি বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। একেবারে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তারা যেমন অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা, শিক্ষা পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। যেটা জাতির পিতার একমাত্র স্বপ্ন ছিল। এরইমধ্যে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এই দেশটা বিশ্ব দরবারে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবে। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, পরনির্ভরশীল হবে না। আত্মনির্ভরশীল-আত্মমর্যাদাশীল হবে। সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলতে চাই।’
বিভাগীয় আটটি শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের কাজেগুলো যাতে দ্রুত এবং মানসম্পন্ন কাজ হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি যে শুধু রাজধানীমুখী না, এই সেবাটা একেবারে তৃণমূল মানুষ যেন পায়, সে জন্য প্রত্যেকটা বিভাগেই আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই মহৎ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সারাবাংলা/এনআর/একে