মরণনেশা মরফিনে আসক্ত শিক্ষার্থীরা
১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:২২
রাজশাহী: জেলার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাউসার আহম্মেদ। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। শহরে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। নেশার জগতে পা রেখেছিলেন সিগারেট দিয়ে। এরপর শুরু হয় গাঁজা সেবন। এরপর ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনও সেবন করেছেন। এখন করছেন মরণনেশা মরফিন।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতার করেছে। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ইনজেকশনের মাধ্যমে মরফিন গ্রহণ করছিলেন কাউসার আহম্মেদ ও তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম। সে সময় তাদের আটক থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভয়ানক তথ্য দেয়।
ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের পরিবারের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মাদক গ্রহণ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন একজন উপপরিদর্শক। তারা সব প্রশ্নের দিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই শিক্ষার্থী জানান, যে ইনজেকশন দিয়ে অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের অচেতন করা হয়, সেই ইনজেকশনই তারা গ্রহণ করেন মাদক হিসেবে। ইনজেকশনটির নাম মরফিন। হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিল ছেড়ে এখন অনেকেই এই মরফিন ইনজেকশন নিচ্ছেন।
দুই যুবক হলেন- নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার সিরাজুল ইসলাম ও শেখপাড়া এলাকার কাউসার আহম্মেদ শাকিল। নেশার টাকা জোগাড় করতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এরপর মরফিন কিনেই রাজশাহী মেডিকেল ক্যাম্পাস এলাকায় বসে একজন আরেকজনকে পুশ করছিলেন। মরফিন ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত।
মরফিন ও পেথিডিন নামের দুটি ওষুধের ট্যাবলেট ও ইনজেকশনের বিষয়ে একটি নির্দেশনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাজশাহী উপ-অঞ্চলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা আছে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ দুটি কোনো ক্রেতার কাছে বিক্রি করা যাবে না। মরফিন বিক্রির ক্ষেত্রে ফার্মেসির মালিকদের সরকারকে হিসাবও দিতে হয়। এরপরও কিছু অসাধু ফার্মেসির মালিক বেশি টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের হাতে মরফিন তুলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রেফতার কাউসার আহম্মেদ বলেন, বছর তিনেক ধরে তিনি মাদক গ্রহণ করছেন। শুরুটা হয়েছিল সিগারেটে। তারপর গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনের পর এখন ইনজেকশন নিচ্ছেন মরফিনের। পরিবার তাকে মাদকমুক্ত করতে চেষ্টা করেছে। তিন মাস করে দুবার রাখা হয়েছিল নিরাময় কেন্দ্রে। তাকে বিয়েও করানো হয়। কিন্তু কাউসার মাদক ছাড়তে পারেননি। এখন সকাল-বিকেলে মরফিন ইনজেকশন নিতে হয়। এই নেশার টাকা জোগাড়ে ছিনতাই করতে হচ্ছে।
কাউসার আরও বলেন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের এখন দাম বেশি। আগের মতো সহজলভ্যও না। তাই পাড়ার এক ভাইয়ের পরামর্শে মরফিন গ্রহণ শুরু করেন। শহরের অনেককেই তিনি চেনেন, যারা এখন অন্য মাদক ছেড়ে মরফিন গ্রহণ করছেন।
গ্রেফতার সিরাজুল ইসলাম এখন প্রায় দুই ডজন মামলার আসামি। তারও শুরু হয়েছিল অন্য মাদকে। সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়ে তিনি মরফিন নেওয়া শুরু করেন। পরিচিত কিছু কিছু ফার্মেসি থেকে এই ইনজেকশন দেওয়া হয় তাদের। প্রথম দিকে ফার্মেসির মালিকদের কাছেই ইনজেকশনটি পুশ করে নিতেন। এখন নিজে নিজেই পারেন বলে জানান কাউসার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাজশাহী উপ-অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, ‘মরফিন ক্যানসারেরও ওষুধ। খুব প্রয়োজনীয় ওষুধ। রাজশাহীর অল্প কিছু ফার্মেসিতে মরফিন বিক্রির অনুমতি আছে। কেউ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া তা বিক্রি করার কথা না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ বলেন, ‘মাদকসেবীদের নিজে নিজে ইনজেকশন পুশ করাটা সাংঘাতিক ক্ষতিকর। মরফিন যেহেতু আফিম থেকে হয়, তাই এর ওভার ডোজের জন্য শ্বাসতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করে না। এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে।’
সারাবাংলা/এনএস