মাটি তুলে নয়, হাওর-বিলে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের নির্দেশনা
১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২১:২০
ঢাকা: বিল বা হাওরাঞ্চলে মাটি তুলে সড়ক নির্মাণের পরিবর্তে এলিভেটেড রোডওয়ে নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা প্রকল্পগুলো হাতে নেই যেমন— এই হাওর অঞ্চল বা বিল অঞ্চল— এসব এলাকায় রাস্তাঘাট করতে গেলে এখন থেকে এলিভেটেড করতে হবে। সেখানে মাটি তুলে রাস্তাঘাট করা যাবে না। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। আমি সবাইকে অনুরোধ করব এই বিষয়টির দিকে লক্ষ রাখতে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২-এর র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন তিনি। এর পেছনে প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন পরিবেশ সুরক্ষার কথা। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে আমার পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, প্রতিবেশ যেন নষ্ট না হয়, জীববৈচিত্র্য যেন নষ্ট না হয়— এসব দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
আরও পড়ুন- মাঠ প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রীর ২৪ দফা নির্দেশনা
অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় সরকার গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে এবং সেই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়ন হয়। এই প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে দেখতে হবে, কোনো প্রকল্পে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে কি না। একইসঙ্গে দেখতে হবে, প্রকল্পের কাজ মানসম্মত হচ্ছে কি না। এসব বিষয়ে নজরদারির ব্যবস্থা আপনাদের অবশ্যই নিতে হবে।
জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় জনপ্রতিনিধিদের সব দিক বিবেচনা করতেও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অর্থাৎ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কিছু প্রতিশ্রুতি থাকে জনগণের কাছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে অবশ্যই আমি এটিও বলব— প্রতিশ্রুতিগুলো যথাযথ কি না, সেটি বিবেচনা করে সেই ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। সার্বিক উন্নয়নে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো পরিহার করতে হবে।
যেকোনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সেটি মানুষের জন্য যথাযথ সেবামূলক কি না, এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে কি না, সেদিকেও লক্ষ রাখতে বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, একটা কিছু করার জন্য করা— এমন যেন না হয়।
এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা-উপজেলা প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি একটি মাস্টারপ্ল্যান করে আমরা পরিকল্পিতভাবে কাজ করি, তাহলে কিন্তু আর কোনো সমস্যা থাকে না। জেলা ও জেলার অধীন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসক বড় অবদান রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন- ‘সরকারি সেবা নিতে এসে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়’
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের পরিকল্পনা করলে সেটি আরও বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যে কাজগুলো যায়, মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও সেগুলো মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন তিনি।
স্থানীয়ভাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালুর তাগিদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কারও কাছে হাত পেতে কিছু করতে চাই না। কিন্তু একটু উদ্যোগ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচি আমরা করতে পারি। পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে, এটি অনেক সফল হয়। তবে এটি নির্ভর করে আমাদের স্থানীয় প্রশাসনের ওপর। আমাদের জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় যারা বিত্তশালী আছেন, সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগের আওতায় এনে এটি চালু করা গেলে সেটি কার্যকর হয়। আমরা দেখেছি, এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমে যায়।
আরও পড়ুন- ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ ভিক্ষা করবে, এটা লজ্জাজনক’
পরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২-এর উদ্বোধন ঘোষণা করে এর সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে ডিসি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, জেলা প্রশাসকদের মধ্যে চাঁদপুর জেলার অঞ্জনা খান মজলিশ, রংপুরের আসিব আহসানসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
এলিভেটেড ওয়ে ডিসি সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী বিল এলাকার সড়ক শেখ হাসিনা হাওর এলাকার সড়ক