‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে দায়িত্ব পালন করুন’
২৩ জানুয়ারি ২০২২ ১২:০৭
ঢাকা: জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) সকালে পুলিশ সপ্তাহ ২০২২- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজারবাগ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আজকে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ২০২১ সালে যখন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলব।’
এই লক্ষ্য অর্জনে পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও রেখে যাবেন বলে বিশ্বাস করি। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিববর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য বলে অবহিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মনে রাখবেন জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়। আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সকল আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’
’৭৫-এর ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এই রাজারবাগে যারা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই।…তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।’
পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নব উদ্যমে কাজ করতে প্রেরণা জোগাবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২৫ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, ৫০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা প্রদান করা হয়েছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তা ছাড়া ২০২০ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২৫ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, ৫০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে অন্যদের এই পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা এবং কমিউনিটি ব্যাংক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন প্রদানের ব্যবস্থা, চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ও গুরুত্বর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ বিভাগীয় পর্যায়ের পুলিশ হাসপাতালের উন্নয়ন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া সকল র্যাঙ্কের পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিবছর ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, নতুন যুগোপযোগী ট্রেনিং মডিউল প্রণয়ন, ট্রেনিং মডিউলের মধ্যে মানবাধিকার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করাসহ বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করার কথা তুলে ধরেন।
জরুরি সেবা ৯৯৯সহ অন্যান্য অ্যাপসভিত্তিক পুলিশ সেবা জোরদার করার দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জরুরি সেবা ৯৯৯। এই সেবার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী দ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে। মানুষের ভেতরে একটা আস্থা বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাসও বেড়েছে।’
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পুলিশের মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের সময় পুলিশের সাহসী ভূমিকা ও পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সবসময় ধ্বংসাত্মক কর্ম করে। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, গাছ কেটে ফেলা, রাস্তা কাটাসহ নানা ধরনের কাজ তারা করেছে, এমনকি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে পুলিশের সদস্যকে আঘাত করা, নির্মমভাবে মেরেছে, সেটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেই সময় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিয়ে এসেছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা করেছেন।’
সে জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/একে