মেজর সিনহা হত্যা পূর্বপরিকল্পিত: আদালতের পর্যবেক্ষণ
৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:৪৯
কক্সবাজার: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পত ছিল বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এই হত্যাকাণ্ডের রায় পড়ার শুরুতে এমন পর্যবেক্ষণ দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
সোমবার দুপুরে ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। তার আগে দুইটার দিকে ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে কক্সবাজার আদালতে আনা হয়। পরে লাইন ধরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় এজলাস কক্ষে, দাঁড় করানো হয় কাঠগড়ায়।
এ মামলার প্রধান দুই আসামি হলেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী। কাঠগড়ায় প্রদীপের পরনে দেখা যায় ধূসর জ্যাকেট। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন লিয়াকত।
সিনহার বোন, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসও তার স্বামীকে নিয়ে বেলা ২টায় উপস্থিত হন আদালতে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে।
তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর একদল তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর বেরিয়ে আসে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কীভাবে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন পোশাকী বাহিনীর কর্মকর্তা প্রদীপ।
হত্যাকাণ্ডের পর ৫ অগাস্ট ওসি প্রদীপ দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তার বোন।
সাড়ে চার মাস পর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজারের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
পরের বছর ২০২১ সালের ২৭ জুন সব আসামির উপস্থিতিতে বিচারক ইসমাইল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
প্রায় দুই মাস পর ২৩ অগাস্ট বাদী শারমিন ফেরদৌসের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। মামলায় মোট সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। তার মধ্যে নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৬৫ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় দেওয়া হচ্ছে।
মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্থ ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক এএসআই লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল ছাফানুল করিম, বরখাস্ত কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্থ এপিবিএনের এসআই শাহজাহান আলী, বরখাস্থ কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও মো. রাজীব হোসেন, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নেজামুদ্দিন।
আরও পড়ুন-
সিনহা হত্যার বিচার চায় বিএনপি
সিনহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু
‘থানায় বসে মেজর সিনহা হত্যার পরিকল্পনা’
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় রায় ৩১ জানুয়ারি
সিনহা হত্যার পর পুলিশের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মূলত সিনহা হত্যার মধ্য দিয়েই বন্ধ হয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’
সিনহা হত্যার রায়: আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার
সিনহা হত্যা মামলা: যেভাবে শেষ হলো তদন্ত ও বিচারকাজ
সিনহা হত্যা মামলার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে: র্যাব ডিজি
সিনহা হত্যা অপ্রত্যাশিত— জানালো পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনও
সিনহা হত্যার চার্জশিট দাখিল: ওসি প্রদীপসহ ১৫ জন আসামি
গণমাধ্যমে সিনহা হত্যা মামলার তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট
সিনহা হত্যা মামলায় ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি
‘সিনহা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে গণমাধ্যমে— খুঁজে বের করব’
‘সিনহা হত্যা নিয়ে ২ বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চলছে’
ওসি প্রদীপের ইয়াবা কারবার জেনে যাওয়ায় মেজর সিনহাকে হত্যা: র্যাব
সারাবাংলা/একে