রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা হস্তান্তর, প্রজ্ঞাপন শিগগিরই
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৫৯
ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের তালিকা হস্তান্তর করেছে সার্চ কমিটি। সেই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এক জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। শিগগিরই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ক এই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সার্চ কমিটির সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব ও মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তালিকা হস্তান্তরের সময়ও তিনি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সার্চ কমিটির সদস্যদের বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটি তাদের চূড়ান্ত করা ১০ জনের নামের তালিকাটি হস্তান্তর করেছে। রাষ্ট্রপতি তালিকাটি গ্রহণ করেছেন। তিনি এই তালিকা থেকে পাঁচ জনকে বাছাই করে নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। শিগগিরই রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
১০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না— জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো তালিকা প্রকাশ করা হবে না। তবে ১০ জনের এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচ জনকে বেছে নেবেন নির্বাচন কমিশনের জন্য। সেই পাঁচ জনের নাম প্রজ্ঞাপনে থাকবে। সার্চ কমিটির তালিকা থেকে যে পাঁচ জনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন না, সেই নামগুলো প্রকাশ করা হবে না।
এর আগে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সার্চ কমিটির সদস্যরা বঙ্গভবনে পৌঁছান। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে বসেন তারা। তবে সার্চ কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এসময় উপস্থিত ছিলেন না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অসুস্থতার কারণে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তালিকা হস্তান্তরের সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি। বাকি সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি কথা বলেছেন এবং তাদের কাছ থেকে তালিকা গ্রহণ করেছেন।
এর আগে, ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি শুরুতেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। সেই সংলাপেও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে আগামী দিনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য ইসি নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব উঠে আসে। পরে গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হয় ইসি গঠন আইন। রাষ্ট্রপতি সেই আইনের অধীনেই গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সোহুল হোসাইন এবং লেখক অধ্যাপক আনোয়ার সৈয়দ হক।
গঠনের পর থেকে সার্চ কমিটি এ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সাতটি বৈঠক করেছে। এছাড়া ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে ৪৭ ব্যক্তির সঙ্গে পৃথক পৃথক তিনটি বৈঠকও করেছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলসহ সংগঠন ও ব্যক্তিদের কাছ থেকেও যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা আহ্বান করেছিল সার্চ কমিটি।
এসব বৈঠক এবং বিভিন্ন দল-সংগঠন ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে সার্চ কমিটি মোট ৩২৯ জনের নাম পায়। এর মধ্যে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জমা পড়া ৩২২ জনের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। এসব নাম থেকে যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটি প্রথমে ৬০ জন, পরে ২০ জন এবং সবশেষ ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করে।
এদিকে, সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে নিজেদের বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিল সার্চ কমিটির কাছে। তবে বিএনপি ও সিপিবিসহ কয়েকটি দল কমিটিতে নামের কোনো তালিকা জমা দেয়নি।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন সবশেষ নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত কোনো কমিশন থাকছে না দেশে। নতুন যে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি গঠন করতে যাচ্ছেন, ওই নির্বাচন কমিশনের ওপরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব থাকছে।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
তালিকা হস্তান্তর নির্বাচন কমিশন বঙ্গভবন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সার্চ কমিটি