Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ মার্চ ২০২২ ২১:৩৫

ঢাকা: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর ছেলে মুসফেক আলম সৈকতের (৩৫) সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে মুসফেক আলমের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র বলছে, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা তিনটি ঘটনার তদন্ত করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির ও দ্বিতীয় ঘটনাটি একই বছরের ১৮ ডিসেম্বরের। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের ২১ জুলাই।

বিজ্ঞাপন

পিবিআইয়ের অনুসন্ধানে প্রথম ও তৃতীয় ঘটনায় মুসফেক আলম সৈকতের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে দ্বিতীয় ঘটনার কোনো প্রমাণ পায়নি পিবিআই।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) পিবিআই ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ জানুয়ারি এ মামলার অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. কবির হোসেন। পরে আদালতের জিআর শাখা গত ৬ ফেব্রুয়ারি অগ্রগামী করে আদালতে অভিযোগপত্রটি পেশ করা হয়। এখন মামলাটি বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

আরও পড়ুন- চ্যানেল ২৪-এর বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের ১০০ কোটি টাকার মামলা

সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা ওই মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে মুসফেক আলম সৈকত। পিবিআই তদন্ত শেষে অভিযুক্তও করেছেন মুসফেক সৈকতকেই। মামলার তদন্তে ভিকটিম, তিন জন সাক্ষী, নির্যাতনের পর ভিকটিম যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন সেই হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসকের লিখিত বক্তব্য এবং মালয়েশিয়ায় নির্যাতনের পর ওই দেশে দায়ের হওয়া জিডি ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞর প্রতিবেদনও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দেওয়া চার্জশিটে সংক্ষিপ্ত মতামতে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তদন্তের সময় মামলার বাদী, সাক্ষী ও অন্যান্য সব পক্ষের বক্তব্য পাওয়া গেলেও বিবাদী মুসফেক আলম সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনি কখনো যোগাযোগও করেননি। অর্থাৎ বিবাদী কোনো বক্তব্য দেননি বা তদন্ত কার্যক্রমে সহযোগিতা করেননি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিবাদী মুসফেক আলম সৈকত ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে আদাবর মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর রোডের ১৭১ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার বাসায় বাদী তাসনোভা ইকবালকে অন্যায়ভাবে আটক রেখে মারধর করেন। বাদীকে হত্যা বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ভারী ধাতব বস্তু দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে জখম করেন। বাদীকে প্রাণনাশের চেষ্টা (পেনাল কোডের ৩৪১/৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারা) অপরাধের প্রমাণ হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বাদী তাসনোভার সঙ্গে বিবাদী মুশফেক সৈকতের বিয়ে বিচ্ছেদের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাদী তাসনোভা একজন আর্কিটেক্ট। তিনি ২০১৭ সালে বৃত্তি নিয়ে মালয়শিয়ায় পড়ালেখা করতে যান। ওই সময় সৈকত ও তার দুগ্ধপোষ্য সন্তান তানাহিতা তার সঙ্গে যান। মালয়শিয়ায় থাকা অবস্থায় প্রায়ই মুশফেক নির্যাতন করতেন তাসনোভাকে। নগদ টাকা চাইতেন। ওই সময় তাসনোভা মালয়শিয়াতে একাধিক জিডি করেন।

আরও পড়ুন- মায়ের আবেদনে ৫ বছরের শিশুকে দেশের বাইরে নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে জোর করে শিশু সন্তানকে নিয়ে সৈকত দেশে চলে আসেন। এরপর বাদী ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সৈকতের বাসায় গেলে তাকে তালাক দেওয়ার কথা বলা হয় এবং তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাদী তার মা, গৃহকর্মী ও সাক্ষীদের নিয়ে আবারও সৈকতের বাসায় যান। সেখানে তাকে আটকে রেখে মাথা টেবিলের ওপর রেখে ধাতব বস্তু দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করেন সৈকত। শরীরিকভাবেও তাকে নির্যাতন করা হয়।

এরপর দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে ফিরে পেতে অথবা এক নজর দেখতে বাদী উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আদালত শুনানি শেষে সপ্তাহে তিন দিন শিশুকে মায়ের কাছে রেখে দেখভালের আদেশ দেন। এরপর ২০২১ সালের ২১ জুলাই ও ১৮ ডিসেম্বর আদাবরের বাসায় শিশুকে দেখতে গেলে তাকে সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দেননি মুশফেক সৈকত।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুকে দেখতে না পেয়ে বাদী তাসনোভা আদাবর থানায় মামলা করতে গেলে বিবাদী প্রভাবশালী হওয়ায় থানা পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর তিনি আদালতে মামলা করেন।

এর আগে, উচ্চ আদালতে তাসনোভার করা পিটিশন নিয়ে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে চ্যানেলটির সিনিয়র রিপোর্টার মাসউদুর রহমানের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে মুসফেক আলম সৈকত। পরে মামলাটির তদন্ত করে পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের পর আদালত তা খারিজ করে দেয়।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল ড. শামসুল হক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী পিবিআই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে মামলার অভিযোগপত্র মুসফেক আলম সৈকত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর