করমজল প্রজনন কেন্দ্রে কুমির প্রতি সরকারি বরাদ্দ ৬ টাকা
১৯ মার্চ ২০২২ ১১:২৯
বাগেরহাট: সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রে প্রতিটি প্রাণির জন্য ২৪ ঘণ্টায় সরকারি খাদ্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ টাকারও কম। এই অপর্যাপ্ত খাদ্য বরাদ্দের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা। এমনকি কুমিরগুলো দেখভালের জন্য লোকবল সংকটের পাশাপাশি নেই কোনো প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমনই অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সরকারিভাবে দেশের একমাত্র হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এরপরও করমজল প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে।
১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের জালে একটি ‘লবণ পানি প্রজাতি’র কুমির ধরা পড়ার পরই কুমিরের বংশবৃদ্ধির প্রাথমিক কাজ শুরু করে বন বিভাগ। ২০০২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে ৮ একর বন নিয়ে ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। শুরু হয় লবণ পানি প্রজাতির কুমির প্রজননের মাধ্যমে কুমিরের বংশ বৃদ্ধির কাজ। সেখানে কুমির বাচ্চা দেয় তিন বছর পর ২০০৫ সালে। বিগত ২০০৬ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে এই কেন্দ্রের ৭৫টি কুমিরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরইমধ্যে ২০৬টি বড় কুমিরের বাচ্চা সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি কুমির চট্টগ্রামের ডুলহাজরা সাফারি পার্কে ও তিনটি পাঠানো হয় ভোলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ফেরুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই রাতে এই প্রজনন কেন্দ্রের সেডের নেট ভেঙে একটি ‘চিতা বিড়াল’ ৬২টি কুমিরের বাচ্চা মেরে ও খেয়ে ফেলে। এর পরের বছর এই কেন্দ্র দুটি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৯১টি ডিম পাড়লেও তা থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি। পুরুষ কুমির মা কুমিরের ডিম খেয়ে ফেলার স্বভাবগত আচরণ কুমিরের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে রোমিও, আলেকজেন্ডার নামে দুইটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দু’টি মা কুমির ও ৯২টি বাচ্চা কুমির রয়েছে। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন ৪০ বছর।
কেন্দ্রের প্রাণীদের জন্য খাদ্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে সরকারিভাবে প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবারের সরকারি বরাদ্দ। লোকবলসহ এসব সংকট দূর হলে কুমির রক্ষায় এই কেন্দ্রটি আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।’ এই প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কুমিরই সুন্দরবনে কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলেও দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এমও
করমজল করমজল প্রজনন কেন্দ্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র দুবলার চর সুন্দরবন