Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমরা অনেক কেঁদেছি, এবার ওরা একটু কাঁদুক’

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ মার্চ ২০২২ ২৩:৪৪

ঢাকা: ২০১১ সালে সাভারের আমিন বাজারে শবে বরাতের রাতে ছয় কলেজছাত্রকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগের মামলায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে ২৫ আসামিকে। মামলা চলাকালীন মারা যাওয়ায় তিন আসামিকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই রায়ের দিকে এখন নিহত ৬ ছাত্রের পরিবার তাকিয়ে আছেন। তাদের আশা, উচ্চ আদালতে এই যেন রায় বহাল রাখা হয়। সর্বোপরি রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০১১ সালের ১৭ জুলাই সাভারের আমিন বাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলারচরে ঘুরতে যায় সাত বন্ধু। ওই সময় ডাকাত সাজিয়ে তাদের ছয় জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাদের মধ্যে থাকা একজন অল্পের জন্য বেঁচে যায়।

ওই হত্যাকাণ্ডে গ্রামবাসীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। গত বছরের ২ ডিসেম্বর ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নিহত টিপু সুলতানের মা কাজী নাজমা সুলতানা বলেন, ‘১১ বছর হয়ে গেছে ৬ টা ছেলেক নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার । আদালত ১৩ জনকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। ১৯ জনকে দিয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আশা করি, উচ্চ আদালতে আসামিদের সাজা বহাল থাকবে। আমরা অনেক কেঁদেছি। এবার ওরা একটু কাঁদুক। বুঝুক স্বজন হারানোর বেদনা। অপেক্ষায় আছি কবে আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হয়। রায় কার্যকর হলে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’

নিহত কান্তর বাবা আব্দুল কাদের সুরুজ বলেন, ‘পৃথিবী দিয়ে দিলেও আমার ছেলেকে পাবো না। প্রমাণিত হয়েছে যে ওরা ডাকাত ছিল না। দেশবাসী জেনেছে ওরা ডাকাত না। যে গ্রামে ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকার পুরো মানুষকে ফাঁসি দিলেও আমার ছেলে ফিরে আসবে না। আমার যা পাওয়ার আমি পেয়েছি।’

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১৩ আসামি হলেন, আবদুল মালেক, সাইদ মেম্বার, আবদুর রশীদ, ইসমাইল হোসেন, জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজ্জব আলী সোহাগ, আলম, রানা, আবদুল হামিদ ও আসলাম মিয়া। এদের মধ্যে জমশের আলী গত ১৪ মার্চ কাশিমপুর কারাহাসপাতালে মারা যান।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি হলেন শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, ওয়াসিম, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নুর ইসলাম, শাহাদত হোসেন, টুটুল, মাসুদ, মোকলেছ, তোতন ও সাইফুল।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্ত ৩২ আসামিকে আলামত নষ্টের দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস তাদের কারাভোগ করতে হবে। ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পান।

ওই সময় বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, একজন প্রকৃত দাগী অপরাধীরও আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ রয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া তাকে হত্যা করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়নি। সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং বিচারের নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। কিন্তু এদের পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারীর মতো আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই আসামিরা নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে। তাই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন।

বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে।

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরে ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতিও দেওয়া হয়।

মামলার চার্জশিটে বলা হয়— আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরবর্তীকালে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়। হত্যা মামলার মোট আসামি ৬০ জন। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

সারাবাংলা/এআই/একে

আমিনবাজার ছয় ছাত্র হত্যা টপ নিউজ সাভার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর