৩৮ চিকিৎসকের ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা লাবিবা-লামিসা
২১ মার্চ ২০২২ ২৩:০৮
ঢাকা: সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয়েছে জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসাকে। দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘণ্টার চেষ্টার পর তাদের আলাদা করা হয়। বর্তমানের শিশু দু’টিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
সোমবার (২১ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনভর চলে এই অস্ত্রোপচার। এরপর রাতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ড ও শিশু পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল বলেন, ‘৩৮ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। সকাল ৮টায় তাদের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। এরপর সকাল পৌনে ৯টায় তাদের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, “এই অপারেশনে আমাদের দু’টি চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমটি হলো- তাদের যোনিদ্বার, পায়ুপথ ও মুত্রনালী খুবই কাছাকাছি ছিল। সেগুলো আলাদা করা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- তাদের দুজনেরই মেরুদণ্ডের নিচের অংশ জোড়া লাগানো। সেখানে কোনো আঘাত লাগলে প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে তাদের আলাদা করা হয়। আলাদা করার পর পরই তারা পা নাড়িয়েছে। এরপর তাদের আলাদা দুটি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি কাজ শেষ হয় রাত সোয়া ৮টার দিকে। জ্ঞান ফিরেই লাবিবা ‘ও কই, ও কই’ বলে বোন লামিসাকে খুঁজতে থাকে।”
ডা. কাজল বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার তাদের মুখে খেতে দেওয়া হবে। তাদের জন্য প্রথম ৪৮ ঘণ্টা খুবই ক্রিটিক্যাল। অপারেশনের এই ধকল সামলাতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে। লামিসার মাসিকের রাস্তা নিয়ে ৩ থেকে ৬ মাস পর আরও কাজ করতে হবে।’
অ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোছলেমা বেগম বলেন, ‘দুই শিশুর ওজন ছিল ১৬ কেজি। তাদের শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক রাখা ও জ্ঞান ফিরিয়ে আনাই ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আল্লাহর রহমতে সবকিছু ঠিক মতো হয়েছে। আমাদের টিমও খুব স্ট্রং ছিল। অপারেশনের পর প্রথমে লাবিবার জ্ঞান ফিরে। এর কিছুক্ষণ লামিসার জ্ঞান ফিরেছে। তারা দু’জনই ভালো আছে।’
আরও পড়ুন:
- অস্ত্রোপচার সফল, আলাদা হলো লাবিবা-লামিসা
- জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার অস্ত্রোপচার চলছে
- লাবিবা-লামিসা পুরোপুরি আলাদা হতে আরও ৬ সপ্তাহের অপেক্ষা
সংবাদ সম্মেলনে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিল্লাত বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, শিশু দু’টিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি। স্পাইনালকডে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। পঙ্গু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেডিকেলকে মানুষের আস্থার বানাতে কাজ করছি। এরকম সফল অস্ত্রোপচার আমাদের আরও এগিয়ে নেবে। আজ জোড়া শিশু আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি। এতে চিকিৎসকরা যেমন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তেমনি নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়ারাও পরিশ্রম করেছেন।’
মেডিকেল বোর্ডে শিশু সার্জারি বিভাগ ছাড়াও ছিলেন- নিউরোসার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, রেডিওলোজি, ইউরোলোজি, অর্থোপেডিকস, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের চিকিৎসকরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার যদুনাথ পাড়া গ্রামের লাল মিয়া ও মনুফা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় শিশু দু’টি। এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর তাদের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। কিন্তু জটিলতা এড়াতে সেদিন পৃথক করা সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/এসএসআর/পিটিএম