Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা ও কৃষিখাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৩৮

ঢাকা: আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো জরুরি উল্লেখ করে এই খাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরামর্শ দিযেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বাড়ানো এবং শিশুদের নিরাপত্তায় আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ করা হয়। এসময় ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিনলাখ টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি আগামী বাজেটে খাদ্যে, রফতানি শিল্পে প্রণোদনা দেওয়া এবং শ্রমিকদের হেলথ ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা, প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি‘র পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষিতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজেটে কিভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে যাতে স্বস্তি দিতে পারা যায়, সেদিকটি নজরে রাখতে হবে সরকারকে।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলনীয় না কিন্তু শিক্ষণীয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। তাই আমাদের বাজার ভিত্তিতে ঋণ আনতে হবে। নতুন নেওয়া ঋণগুলো কোন সময় দিতে হবে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোকে সাশ্রয়ী সময়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।’

বিজ্ঞাপন

বাজারে মূল্যস্ফীতি বাস্তবসম্মত রাখার পরামর্শ দিয়ে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন, আগামী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিনলাখ টাকা এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদী হবে না। দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সবুজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।’

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১ শতাংশ কমে গেছে। অথচ অন্য এলডিসির ৩০টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অনেক পণ্য আছে যেগুলোর ব্যবহার ক্ষতিকর। সেগুলোর কর বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সিগারেট। সিগারেটের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ সারচার্জসহ ৫০ শতাংশ ট্রাক্স বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি সফট ড্রিংক স্বাস্থ্যখাতের কোন উপকার আসে না বরং ক্ষতি করে। ফলে এই খাতে ট্যাক্স বাড়ানো এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন যেগুলো মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। এটার ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে।’

এসময় তিনি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হিসাবটি সঠিকভাবে করতে হবে। সঠিক তথ্যগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বড়বড় মেগাপ্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার কারণে দুর্নীতি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যয় বাড়লে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো লাভজনক নাও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর, জিডিপির রেশিও বাড়ার পরিবর্তে তা কমছে। এটা কোভিডের আগে কর জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও বর্তমানে তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপির আকার বাড়লেও কর আদায় কমছে। এটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। আমাদের রফতানি আয় বাড়লেও আমদানি তার চেয়েও বেশি বাড়ছে। এতে করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। বাজেটের মূল দর্শন হতে হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির কিভাবে আয় বাড়ানো যায়।’

সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় না, তবে শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। নতুন ঋণগুলো আমরা কিন্তু বেশি সুদে কম সময়ের জন্য নিচ্ছি। শ্রীলঙ্কাও তাই করেছিল কিন্তু এতে করে তারা ধরা খেয়েছে। বড় প্রকল্পগুলো আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এটার দিকে রজর দিতে হবে। আমাদের বাণিজ্যঘাটতি প্রথম ৮ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার। এটা বছর শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে আমরা গত কয়েকবছর ধরেই কথা বলছি। বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়েছে আমদানি রফতানির আড়ালে। এবারের বাজেটে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি সর্তক থাকতে হবে। পাশাপাশি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবাযনে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বড় প্রকল্প নেয়া যাবে না।’

অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নির্বাচনের বছর এসে যেন সরকার কর ও ঋণ খেলাপিদের কোনো ধরনের সুবিধা না দেয়।’

সারাবাংলা/জিএস/এমও

কৃষিখাত বাজেট সামাজিক সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর