ইদের কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে সেমাই কারখানায়
২১ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৩৮
রাজবাড়ী: ইদের খাদ্য তালিকার অপরিহার্য উপাদান সেমাই। তাই ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজবাড়ীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেমাই কারখানার কারিগর ও শ্রমিকরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে সেমাই তৈরির কাজ। এসব সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলাগুলোতেও। ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক উভয় পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সেমাই। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত সেমাই বাজারে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং খোলা সেমাই বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরী এলাকার দ্বীন ফুড প্রোডাক্ট, শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও কাজী ফুড প্রোডাক্ট নামে তিনটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসব সেমাই। সবগুলো কারখানা মিলিয়ে প্রায় ৫০জন কারিগর ও শ্রমিক এসব কারখানায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গতকাল বুধবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
দ্বীন ফুড প্রোডাক্টের (ডায়মন্ড সেমাই) সেমাই তৈরির প্রধান কারিগর মমিন শেখ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে গত দুই বছর আমরা তেমন কাজ করতে পারিনি। তবে এ বছর ইদ উপলক্ষে কাজের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। কোনোরকম রং ও কেমিক্যাল ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা সেমাই তৈরি করছি। প্রথমে ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরি করে তা রোদে শুকিয়ে তারপর ভাজা হয়। এরপর প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হয়।’
সেমাই কারখানার শ্রমিক ফিরোজা বেগম বলেন, ‘সারাবছরই আমরা সেমাই তৈরির কাজ করি। তবে ইদের সময় কাজের চাপ বেড়ে যায়। আমাদের হাতের তৈরি সেমাই খেয়ে মানুষের ইদের দিনের শুরু হবে, এটা ভেবে অনেক আনন্দ নিয়ে কাজ করছি।’
দ্বীন ফুড প্রোডাক্টের মালিক কামিরুল হোসেন বলেন, ‘রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীতে জমি লিজ নিয়ে কারখানা নির্মাণ করে প্রায় ২০ বছর ধরে সেমাই তৈরি করে আসছি। করোনার কারণে গত দুই বছর কারখানাটি ঠিকমতো চালাতে পারিনি, শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে এবার ইদে আবারও কারখানা চালু করেছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আমরা রং ও কেমিক্যাল ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাইগুলো তৈরি করি। এজন্য বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘জেলার চাহিদা পূরণ করে সেমাইগুলো ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় বাজারজাত করি। সেমাইগুলো সর্বনিম্ন ২০০ গ্রামের প্যাকেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওজনের প্যাকেটজাত করা হয়। যাতে সকল শ্রেণিপেশার ক্রেতা তাদের সামর্থ ও চাহিদা অনুযায়ী সেমাই কিনতে পারেন।’
কামিরুল হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমানে সেমাই তৈরির কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, কারিগর ও শ্রমিকদের মজুরি, জমির লিজ ভাড়া ও সরকারের ভ্যাটসহ সব খরচ মিটিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ ধরনের কুটির শিল্প বাঁচাতে সরকারের কাছে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সেমাইয়ের উৎপাদন আরও বাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য বিসিক শিল্প নগরী কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান কামিরুল হোসেন।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, ‘বিসিক শিল্প নগরীর তিনটি সেমাই কারখানা আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই সেমাই তৈরি করছে। এখানকার সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রাজবাড়ী জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেমাই কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এনএস