Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেট-পিঠে কাটা দাগ, নিরাপত্তারক্ষীই গুলশানে স্বর্ণচুরির হোতা


১৭ এপ্রিল ২০১৮ ২১:২২

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ছাদের কাটা অংশটি ছিল শরীরের তুলনায় ছোট। তা দিয়ে নামতে গিয়ে সোবহানের পেট ও পিঠের নানা অংশ কেটে-চিঁরে যায়। সেই কেটে যাওয়া ত্বকের ওপর ইউনিফর্ম পরেই তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন পুলিশ-গোয়েন্দাদের আশে পাশে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে ধরে ফেলেছে পুলিশ। এতে উদ্ধার হয়েছে রাজধানীর গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটে আমিন জুয়েলার্স থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণ ও টাকা।

সোবহান ছিলেন আমিন জুয়েলার্সের সিকিউরিটি প্রধান। সেই রক্ষক নিজেই ভক্ষক হয়ে চুরি করেন দোকানের স্বর্ণ ও নগদ অর্থ।

মালিক পক্ষের দাবি ৬৮৯ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ২৪ লাখ টাকা চুরি যায় এই জুয়েলার্স থেকে।

সোবহানকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে খোয়া যাওয়া স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রোববার (১৫ এপ্রিল)। তবে শনিবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের রাতেই ঘটে ভয়াবহ চুরির ওই ঘটনা।

গুলশান থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আবুবকর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় দোকান বন্ধ করে চলে যান আমিন জুয়েলার্সের কর্মচারীরা। পরদিন রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মার্কেট বন্ধ ছিল। সোমবার সকাল ১১টার দিকে দোকান খুলে টাকা ও স্বর্ণ চুরি হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। তখনই দোকানের ছাদ কাটা অংশটি দেখতে পান কর্মচারীরা। চুরি করার পর আবার তা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানান তারা।

এরপর গুলশান থানা পুলিশের একটি দল ওই শোরুমে তদন্তে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের অংশ হিসেবে প্রধান নিরাপত্তারক্ষী সোবহানকে বেলা ১টার দিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তার শরীর চেক করতে গেলে বুক, পেট, পিঠে কাটা-চেঁরা ধরা পড়ে।

সন্দেহ হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে সোবহান ঘটনার সাথে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

ছাদের কাটা অংশ দিয়ে সোবহান নিজেই ভেতরে ঢুকে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে বের হন। কাটা অংশটি শরীরের মাপের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট থাকায় তার গায়ের নানা অংশ ছিলে যায় বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোবহান আরও জানিয়েছেন, চুরির এই ঘটনায় তার অপর সহযোগী ছিলেন সাদ্দাম নামে একজন। সাদ্দামেরই সে রাতে দোকানের ভেতরে ঢুকে চুরি করার কথা ছিল। কিন্তু ছিদ্র কাটার পর তিনি দোকানে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানালে সোবহানকেই বাধ্য হয়ে ঢুকতে হয়।

সোবহান জানিয়েছেন, সাদ্দামের চেয়ে অপেক্ষাকৃত মোটাসোটা হওয়ায় তার শরীরের তুলনায় ছিদ্রটি ছিল ছোট। আর সে কারণেই তার শরীরের নানা অংশ কেটে-চিঁরে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে সোবহানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জে অভিযানে যায় গুলশান থানা পুলিশ। চাঁদপুরের অভিযানে নেতৃত্ব দেন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম আর গোপালগঞ্জের অভিযানে নেতৃত্ব দেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন।

পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে সারাবাংলাকে বলেন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়ালী গ্রামে সাদ্দামের বাড়ি থেকে ২১১ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সাদ্দামকে না পেয়ে তার মা জানু বেগম ও বাবা আমানুল্লাহকে আটক করা হয়।

আমিনুল বলেন, এলাকায় অনেকেই জানিয়েছে, সাদ্দাম একজন ডাকাত।

অন্যদিকে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন মোবাইল ফোনে সারাবাংলাকে বলেন, চাঁদপুর থেকে স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধারের পর গোপালগঞ্জে সোবহানের বাড়ি থেকেও বাকি স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই ওই সব স্বর্ণ ও টাকা ঢাকায় নিয়ে আসা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে ওসি আবুবকর জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আপাতত তদন্ত চলছে।

গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটের আমিন জুয়েলার্সের ওই শোরুমে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ পাহারায় মার্কেটের দক্ষিণ দিকে দ্বিতীয় তলায় জুয়েলার্সের দোকানটি খোলা রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় দু’জন ও ছাদে যে জায়গায় কাটা হয়েছে সেই জায়গাতেও দু’জন পুলিশ সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।

আমিন জুয়েলার্সের এই শোরুমে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মচারীরা কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বাইরে এসে বলেন, শনিবার রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সোবহান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করার পর চাবি ভেতরে রেখেই চলে যান সবাই। পহেলা বৈশাখে দোকানের বিক্রি ভালো ছিল। সারাদিনের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ পুরোটাই দোকানে রাখা ছিল।

তিনি বলেন, সোবহান হয়তো বৈশাখের এ দিনটিকে টার্গেট করেই পরিকল্পনা করেছিল। কারণ তার পরের দিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। চাবি ভেতরে রাখা হয়েছে এ কথা সোবহান নিজেও জানত। বছর খানেক হলো সোবহান এই শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান এই কর্মচারী।

ছাদের ওপরে গিয়ে দেখা যায়, এক বর্গফুট সাইজের ছাদের একটি জায়গার চতুর্দিকে দাগ দেওয়া। দেবদাস নামে পুলিশের একজন কনস্টেবল এসে দেখিয়ে দিলেন এই জায়গাটিই কাটা হয়েছিল। এ জায়গা দিয়েই চুরি করার পর আবার তা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

আরও দেখা যায়, পুরো ছাদে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। পুলিশ ধারণা করছে, ছাদে কাজ করা মিস্ত্রিদের কেউ এই ঢালাইয়ের কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে।

কতদিন থেকে কারা ছাদে কাজ করছেন, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসান হার্ডওয়ারের মালিক চৌধুরী হাসান উদ্দিন বলেন, এক বছর ধরে সিটি করপোরেশনের তদারকিতে ছাদের পাকা করণের কাজ চলছে। কারা কাজ করছে তা জানতে সিটি করপোরেশনের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সারাবাংলা/এমএম

আমিন জুয়েলার্সের বাকি স্বর্ণ মিলল গোপালগঞ্জে
আমিন জুয়েলার্সের স্বর্ণ ও টাকা মিলল চালের ড্রামে

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook 

 


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর