সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৫৩৮৬ কোটি টাকা
৮ মে ২০২২ ২০:৩১
ঢাকা: আগামী ২০২২-২০২৩ সালের অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতের প্রতিটি উপখাতেই বরাদ্দ বাড়ছে। আসছে বাজেটে এই খাতে ৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ৫ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
অন্যদিকে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং জিডিপি’র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট ছয়টি উপখাত রয়েছে। এর মধ্যে ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ উপখাতের আওতায় রয়েছে ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ইত্যাদি। আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেটে এ উপখাতে ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই উপখাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটে ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ উপখাতে ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে।
অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের দ্বিতীয় উপখাতটি হচ্ছে ‘সামাজিক কল্যাণ’। এ উপখাতের আওতায় রয়েছে বিবিধ তহবিল, যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ইত্যাদি। আগামী বাজেটে এসব উপখাতে মোট ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ উপখাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ‘সামাজিক কল্যাণ’ উপখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭৪০ কোটি টাকা।
এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা খাতের তৃতীয় উপখাতটি হচ্ছে ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন’। এই খাতের আওতায় রয়েছে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রাথমিক ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি, মাধ্যামিক উপবৃত্তি ও উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি। আগামী বাজেটে এই খাতে মোট ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এখানে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন’ উপখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সামাজিক সুরক্ষা খাতের চতুর্থ উপখাতটি হচ্ছে ‘কর্ম সৃজন’। এই উপখাতের আওতায় রয়েছে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প/কর্মসূচী। আগামী বাজেটে এসব খাতে মোট বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এখাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ‘কর্ম সৃজন’ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৮৫৭ কোটি টাকা। সামাজিক সুরক্ষা খাতের পঞ্চম উপখাতটি হচ্ছে ‘অবসর ও পারিবারিক ভাতা’। এই খাতের আওতায় আছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী।
আগামী বাজেটে এসব উপখাতে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এসব খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। আগামী ২০২২-২৩ অল্থবছরের বাজেটে ‘সামাজিক কল্যাণ’ উপখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
এছাড়াও অন্যান্য উপখাতের আওতায় রয়েছে বিভিন্ন ‘ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি’। আগামী বাজেটে এই খতে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। ফলে আসছে বাজেটে এই উপখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা চতুর্থ বাজেট এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২ ত, বাজেট। এবার বাজেটের প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আগামী বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বেশি।
চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ হাজার কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/একে