রাজশাহী: ধানের জমি ফেটে চৌচির হলেও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর দুই কৃষককে পানি দেননি। তিনি কাছের লোকদের আগে পানি দিতেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চাষিদের পানির জন্য ঘোরাতেন। আর তাই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চাষি অভিনাথ মারান্ডি ও রবি মারান্ডি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন।
এ দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় অভিযোগপত্রে পুলিশ এ কথা বলেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের অভিনাথ ও তার চাচাতো ভাই রবি গত ২৩ মার্চ বিষপান করেছিলেন। এতে অভিনাথ সেদিনই এবং একদিন পর রবি মারা যান।
এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় আলাদা দু’টি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। কিন্তু দুই কৃষক চোলাই মদ পান করে মারা গেছেন বলে প্রথম দিকে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। তাদের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’জনে একই ধরনের বিষপান করে মারা গেছেন। এরপর পুলিশ আদালতে মামলা দু’টির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
আরও পড়ুন-
- ২ কৃষকের আত্মহত্যা: পাম্প অপারেটর গ্রেফতার
- ‘সেই’ দুই কৃষকের মৃত্যু বিষপানেই: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন
- দুই কৃষকের আত্মহত্যা: হয়রানি না দেখে জমি দেখছেন সবাই
- জমিতে পানি না দেওয়ায় বিষপান করা আরেক কৃষকেরও মৃত্যু
- ২ কৃষকের আত্মহত্যা: স্বজনদের সঙ্গে কথা বলল তদন্ত কমিটি
- জমিতে পানি দেয়নি পাম্প অপারেটর, ক্ষোভে কৃষকের আত্মহত্যা
- দুই কৃষকের আত্মহত্যা: পাম্প অপারেটরকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
- সেচের পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
- পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি
মামলা দু’টিতে একমাত্র আসামি করা হয়েছিল বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনকে। ঘটনার ১১ দিন পর তিনি গ্রেফতার হন। বিএমডিএ সেদিনই তাকে চাকরিচ্যুত করে। তিনি এখন কারাগারে। অভিযোগপত্রে পুলিশ শুধু সাখাওয়াত হোসেনকেই অভিযুক্ত করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গত মাসের শেষের দিকে অভিনাথের মৃত্যুর ঘটনার মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এরপর চলতি মাসের শুরুতে রবির মামলাটিরও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
এসআই বলেন, অপারেটর সাখাওয়াত পানি দিতে কৃষকদের হয়রানি করতেন। স্বজনপ্রীতি করে কাছের লোকদের আগে পানি দিতেন। অভিনাথ ও রবি পানি না পাওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল। তদন্তেও সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই অভিযোগপত্রও সেভাবে করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবদুর রফিক বলেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে গোদাগাড়ী থানা থেকে অভিযোগপত্র দু’টি প্রথমে আমার দফতরে পাঠানো হয়েছিল। পরে অভিযোগপত্র দু’টি আদালতে দাখিল করেছি। আদালত অভিযোগপত্র দুইটি গ্রহণ করেছেন।