Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে উদ্বেগ, সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে ইইউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ মে ২০২২ ২১:৩১

ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অঞ্চলটিতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ঘিরে বৈশ্বিক ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ থেকেই মূলত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ইইউ’র বিশেষ দূত গ্যাব্রিয়েল ভিসেন্টিন বলেন, যেকোনো সময় প্রয়োজন হলেই সদস্য দেশগেুলোকে সহায়তা করার পাশাপাশি প্রয়োজনের সময় সুরক্ষায় ভূমিকা রাখাও আমাদের লক্ষ্য। এটি সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয় নয়। বরং এটি আমাদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর একটি পথমাত্র।

বিজ্ঞাপন

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত। ভিনসেন্টিন বলছেন, এই অঞ্চলে যুদ্ধ আসন্ন— এমনটি বলার মতো কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে বহুপাক্ষিক সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে যেসব বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে পালন না হওয়া নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে নিযুক্ত ইইউ’র এই বিশেষ দূত আরও বলেন, বহুপাক্ষিক বিধিবিধান লঙ্ঘনের জন্য অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়। যারা এসব বিধিবিধান লঙ্ঘন করতে চায় তাদের প্রতি এটি একটি বার্তা যে বিধিবিধান লঙ্ঘনের জন্য তাদের কীসের মুখোমুখি হতে হবে।

শুরু থেকেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য চীনকে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়। ভিনসেন্টিনও স্পষ্ট করেই বলছেন, চীনকে ইইউ ‘অংশীদার, প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী‘ হিসেবেই দেখে আসছে।

চীন ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মধ্যেকার সামরিক সম্পর্ক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য নিয়ে একটি খসড়া নিরাপত্তা চুক্তি ফাঁস হয় গত মার্চে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো দীর্ঘ দিন ধরে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অংশীদার হিসেবে কাজ করে আসছে। তবে চীনের সঙ্গে ওই চুক্তির বিষয়ে এসব দেশ কিছুই জানে না। মূলত এরপর থেকেই ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

খসড়া হলেও ওই চুক্তির কারণে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপণ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, ওই চুক্তিতে অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে দুই হাজার কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে চীনকে। ওই সময় ফ্রান্স চুক্তিটিকে ‘বহুমাত্রিক উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে অভিহিত করে। বিবৃতিতে ফ্রান্স বিশেষ করে অঞ্চলটির ‘নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ নিয়ে উদ্বেগ জানায়।

ইইউ ওই চুক্তিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে কি না— পুরো চুক্তিটি না দেখে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান গ্যাব্রিয়েল ভিসেন্টিন। তিনি বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্র সার্বভৌম। তাদের নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ আমাদের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে— ইইউ ও অন্যদের আরও অনেক কিছুই করতে হবে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত সুজিরো সিম বলছেন, চুক্তিটি ইঙ্গিত দিয়েছে যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে ইইউকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে ইইউ’র অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চীন ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মধ্যেকার চুক্তিটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

সুজিরো সিম বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে ইইউ। সেখান থেকে ইইউ কীভাবে এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের কৌশলগত অংশীদার কিংবা অন্য কোনো কিছু হতে পারে, সেটিই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

এদিকে, গত মার্চে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি জোরদার করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একে বলা হচ্ছে ‘দ্য স্ট্র্যাটেজিক কম্পাস’। এই রোডম্যাপের মধ্যে দিয়ে যেকোনো সংকট, জোটভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তা ও নাগরিকদের রক্ষা করার ক্ষমতাকে উন্নত করবে ইইউ।

ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই কৌশল গ্রহণ করা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেছেন সিম। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় উচ্চ ধারণাকে সমর্থন করে।’

ইইউ’র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশেষ দূত গ্যাব্রিয়েল ভিসেন্টিন আরও বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন বা সৈন্য মোতায়েনের মতো বিষয় থাকবে না, যদি না তেমন কোনো সংকট দেখা দেয়। এক্ষেত্রে সামরিক প্রশিক্ষণ, স্থলে ও সমুদ্রে সরাসরি অনুশীলন পরিচালনা করা, গোয়েন্দা যোগাযোগ বাড়ানো এবং সামুদ্রিক স্বার্থ অনুযায়ী ইইউ’র জাহাজগুলো ওই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলাচলে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসবে।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সারাবাংলার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন নিউজরুম এডিটর নূর সুমন

সারাবাংলা/এনএস/টিআর

ইইউ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চীন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর