সিলেটে পানি কমছে, বাড়ছে দুর্ভোগ
২৩ মে ২০২২ ২১:৫৭
সিলেট: উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল থেমে যাওয়ায় ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে সিলেটে বন্যার পানি কমছে। গত দুই দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় রোগব্যাধির বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছে মেডিকেল টিম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাইঘাটে সুরমা, জকিগঞ্জে অমলসীদ ও শ্যাওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটে সুরমার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া শেরপুরে কুশিয়ারা ও জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো সিলেটের উপবিভাগীয় প্রধান এ কে এম নিলয় পাশা জানিয়েছেন, উজানের ঢল কমে যাওয়ায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি রয়েছে। নগরের কুশিঘাট, ছড়ারপাড়, ঘাষিটুলাসহ কয়েকটি এলাকায় মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তবে পানি নেমে যাওয়ায় নগরীর উপশহর, যতরপুর, কাজিরবাজার, কালিঘাটসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বন্যায় বাসাবাড়িতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয়দের বাড়ি গিয়েছিলেন, তারা বাসায় গিয়ে ধোয়া-মোছার কাজ করছেন। নগরের বন্যা কবলিত এলাকায় রাস্তা তলিয়ে অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। এছাড়া পানির পাম্প ও পানি শোধানাগারকেন্দ্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, পানি কমায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হচ্ছে। উপশহরে ৯০ ভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। নগরের নিম্নাঞ্চলের ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো বন্যার্ত মানুষ রয়েছেন। দুয়েকদিনের মধ্যে পানি না বাড়লে তারাও বাসায় ফিরতে পারেন। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে নগর কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করছে বলে জানান তিনি।
পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেট নগরের বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাট ও কাজিরবাজার। চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, এক রাতের মধ্যে ঢলে তলিয়ে যায় কালিঘাট। এতে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর এখন নতুন করে ব্যবসা চালু করা হচ্ছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, কাজিরবাজারে অনেক চালকলে পানি ঢুকেছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, কানাইঘাট সদরে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কানাইঘাটের প্রায় ৫০টি গ্রামে এখনো পানি রয়েছে। কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে যাওয়ায় নতুন করে দীঘিরপাড় পূর্ব ও সাতবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলাতেও। এসব এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। ওসমানীনগরের শেরপুর, বালাগঞ্জের পশ্চিম ও পূর্ব গৌরিপুর ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। তবে পানি কমতে থাকায় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সারাবাংলা/টিআর