বাঘার ৩০০ মেট্রিক টন আম যাবে বিদেশে
৩১ মে ২০২২ ০৮:২৬
রাজশাহী: চলতি মৌসুমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৩০০ মেট্রিক টন আম রফতানি করা হবে। শুধু বাঘার ২২০ জন আমচাষির কাছ থেকেই এ আম যাবে দেশের বাইরে। ইতোমধ্যে আমচাষিরা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে চুক্তিও করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই গাছ থেকে আম নামাতে শুরু করবেন চাষিরা। এইবার প্রায় তিন কোটি টাকার আম রফতানির আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চুক্তিবদ্ধ চাষিরা লক্ষণভোগ বা লখনা, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত এবং ল্যাংড়া আম বিদেশে রফতানির উপযোগী করে উৎপাদন করছেন। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা ও হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে। ৬ জুন থেকে নামবে ল্যাংড়া। কয়েকদিন পর এসব আম বিদেশে পাঠানো শুরু হবে। রাজশাহী থেকে এ বছর ৩০০ মেট্রিক টন আম রফতানি হলে তিন কোটি টাকা পাবেন চাষিরা।
বাঘা উপজেলার আমচাষি শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, গত কয়েক বছর ধরেই তিনি রফতানিকারকের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠাচ্ছেন। এবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে রফতানি উপযোগী করে আমচাষ করেছেন। ১ জুন থেকে তিনি আম নামাবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রফতানি উপযোগী বেশি আম উৎপাদন করতে পারি, কিন্তু রফতানি হয় কম। তবে এবার অন্য বছরের চেয়ে আমের চাহিদা বেশি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মনে করছি রফতানি বাড়বে।’
তবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে রফতানিকারকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি এমন একজন চাষি ইতোমধ্যে ৫০০ কেজি গোপালভোগ আম সুইডেনে পাঠানোর জন্য গাছ থেকে নামিয়ে রফতানিকারকের কাছে পাঠিয়েছেন। রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকায় আনোয়ারুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তির আমবাগান। তিনি রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড সোসাইটির সভাপতি। প্রতিবছরই তিনি তার বাগানের ফ্রুট ব্যাগিং করা আম বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন।
বাঘা ছাড়া অন্য কোনো জায়গার চাষিদের চুক্তিবদ্ধ না করানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে আনোয়ারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগ শুধু বাঘা উপজেলার চাষিদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনে। কিন্তু আম তো রাজশাহীর সবখানেই হয়। পবা থেকেও আম যায়। বাঘার চাষিদের পুরনো একটা তালিকা কৃষি বিভাগের কাছে আছে এবং শুধু তারাই কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসে। আমাদের যেহেতু কিছু বলা হয় না, তাই নিজেদের মতো করে আম পাঠাই।’
আনোয়ারুল জানান, এনজেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এন হোসেন সজলের মাধ্যমে তিনি সুইডেনে আম পাঠাচ্ছেন। শুক্রবার আম নামানোর পরই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এনজেল গ্রুপ উড়োজাহাজে করে আম নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাগিং করা আম খুবই ফ্রেশ। আমের কাছে কীটনাশক তো দূরের কথা; একটা পিঁপড়াও যেতে পারে না। তাই হট কেকের মত আমার আম শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
আনোয়ারুল ইসলাম গত শুক্রবার থেকেই রফতানির উদ্দেশ্যে আম নামিয়ে ঢাকায় পাঠানো শুরু করলেও সে খবর নেই কৃষি বিভাগের কাছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বাঘা উপজেলার প্রায় ২২০ জন চাষি ৩০০ মেট্রিক টন আম দেবেন বলে হটেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রফতানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এদের হিসাবটাই শুধু আছে। তবে চাষি ও রফতানিকারকদের উদ্যোগেই উড়োজাহাজে আম পাঠানো হয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা নেই।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুক্তিবদ্ধ চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ দিই। তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়। এই কাজটি শুধু বাঘা উপজেলায় হয়।’
রফতানি করতে হলে রফতানিকারকদের আম ঢাকায় সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউজে নিতে হয়। সেখানে আমের মান যাচাই করে গুণগত প্যাকেটিং হয়, যাতে আম বেশি সময় ভাল থাকে। তারপরই তা রফতানির জন্য ছাড়পত্র পায়।
রাজশাহীতে এ বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এসব বাগানে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে। আর এই আম নিয়ে রাজশাহীর অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে ৯০০ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর চাষিরা রফতানি করা আমে কেজিপ্রতি দাম পেয়েছিলেন ৯০ টাকা। এবার ফলন একটু কম বলে দাম বেশি। এখনই বাজারে ভালো আম ৬০ টাকা কেজি। সুতরাং, সব চাষির আম যদি রফতানি না-ও হয়, সেক্ষেত্রেও তারা ভাল দাম পাবেন। কারণ, ব্যাগিং করা ফ্রেশ আমের দাম এমনিতেই বেশি হয়। তবে এবার কোভিডের সংক্রমণ না থাকায় বেশি পরিমাণে আম রফতানি করা যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।’
সারাবাংলা/পিটিএম