৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ নারী ও শিশু নির্যাতন মে’তে: সমীক্ষা
৩১ মে ২০২২ ২৩:১৩
ঢাকা: মে মাসে সারাদেশে ৪১৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংগঠনটি বলছে, চলতি বছরে এ মাসেই সর্বোচ্চ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ৩২৫টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৫৬টি, মার্চে ৩৯৭টি ও এপ্রিল মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল ৩৬৭টি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সংগ্রহ করা তথ্যের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ মে) মে মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার (ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতা) ঘটনা আগের মাসগুলোর তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
১৩টি জাতীয় গণমাধ্যম ও এমএসএফের সংগ্রহ করা তথ্য বলছে, মে মাসে সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৪টি। এর আগে এপ্রিলে ৭১টি, মার্চে ৬৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ১০৩টি ও জানুয়ারিতে ৬৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ বছরের এই পাঁচ মাসের মধ্যে কেবল ফেব্রুয়ারিতেই ধর্ষণের সংখ্যা মে মাসের চেয়ে বেশি ছিল।
এদিকে, মে মাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২টি, যা এপ্রিল মাসে ছিল ১৪টি, মার্চে ৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি ও জানুয়ারিতে ১২টি। আগের মাসগুলোর তুলনায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়েছে মে মাসে।
আরও পড়ুন-
- মার্চে ৮১ নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ৬৯
- ৪৫ শিশু-কিশোরীসহ জানুয়ারি মাসে ৬৫ ধর্ষণ
- দেশে এপ্রিল ৯ প্রতিবন্ধীসহ ধর্ষণের শিকার ৭১ জন
- ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণ জানুয়ারির দেড় গুণ, বেড়েছে আত্মহত্যা
মে মাসে ধষর্ণের শিকার ৮৪ নারী ও শিশুর মধ্যে চার কিশোরীসহ প্রতিবন্ধী ১০ জন। আবার এর মধ্যে শিশু ও কিশোরীর সংখ্যা ৫১। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারের মধ্যে প্রতিবন্ধী একজন। আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৯ কিশোরী। এই মাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪ জন নারী ও শিশু। আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এক কিশোরী ও তিন নারীকে। এ মাসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২১টি, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ২৬টি এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৫টি।
এছাড়াও, মে মাসে দুই শিশু, ২৫ কিশোরী ও ৫৯ জন নারীসহ মোট ৮৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে দুই জন প্রতিবন্ধী নারীও রয়েছেন। একই সময়ে অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন এক শিশু ও তিন নারী। অপহরণের শিকার হয়েছে দুই শিশু ও পাঁচ কিশোরী। অন্যদিকে তিন শিশু ও সাত কিশোরী এবং দু’জন জন নারী নিখোঁজ হয়েছেন।
এছাড়াও মে মাসে ১০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮০ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১২, কিশোরীর সংখ্যা ১১। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাতে এমএসএফ বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের, যৌতুক ও প্রেমঘটিত বিষয়ের কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
মে মাসে একটি মৃত ও দুইটি জীবিত নবজাতককে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এমএসএফ একে অমানবিক ও নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করে এ শিশুদেরকে কী কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, তা নিরূপণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে বলে মনে করছে।
মে মাসে সামগ্রিকভাবে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এমএসএফ মনে করে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। এসব কারণে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
ধর্ষণ ধর্ষণচেষ্টা নারী ও শিশু নির্যাতন নারী নির্যাতন সংঘবদ্ধ ধর্ষণ