কলমাকান্দার মহাদেও নদীর প্রতিবেশ রক্ষায় হাইকোর্টের রুল
১৪ জুন ২০২২ ০০:১৯
ঢাকা: আইনবহির্ভূতভাবে ও নির্বিচারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিবেশগত ক্ষতিরমুখে থাকা নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদীর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং সহকারী পরিচালককে তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে কলমাকান্দা উপজেলার সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদী, নদী সংলগ্ন ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসতবাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি রক্ষার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না এবং মহাদেও নদী, নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে তা আইন অনুসারে হিসাব করে ইজারা গ্রহীতাসহ দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়ের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
ভূমি সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ১০ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৩ জুন) পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে বেলা জানায়, মহাদেও নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয় পাহাড়। নদীটি মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ৮ নম্বর রংছাতি ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর ওমরাগাঁও, হাসানোয়াগাঁও এবং বিশাউতি মৌজায় একটি ঘোষিত বালুমহাল রয়েছে। ইজারা দেওয়া সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে ব্যবসায়ীরা।
বেলার অভিযোগ, বালুমহালে বালু না থাকায় মহাদেও নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে ইজারা গ্রহীতা। অনিয়ন্ত্রিত, আইনবহির্ভূত ও নির্বিচারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, মৌতলা, বরুয়াকোনা, ডাকাইয়াপাড়া, কান্দাপাড়া, রাজবাড়ী, সতেরহাতি, ব্যস্তপুর, ছোটমনগড়া ও চিকনটুপ গ্রামবাসীর ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসতবাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশিক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাদেও নদী ও এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা।
পরে এলাকাবাসী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বরাবর বারবার বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরলেও সংশ্লিষ্টরা তা আমলে না নেওয়ায় ক্রমশ বিলীন হচ্ছিল তাদের সম্পদ। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছিল মহাদেও নদীর অস্তিত্ব। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এলাকাবাসী বেলার কাছে আইনি সহযোগিতা চাইলে জনস্বার্থে বেলা হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম