এমপিকে নিজ এলাকা ছাড়তে বলা মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ: তথ্যমন্ত্রী
১৪ জুন ২০২২ ১৯:২৫
ঢাকা: কোনো সংসদ সদস্যকে নিজের নির্বাচনি এলাকা ছেড়ে যেতে বলাকে মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের সামিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, এভাবে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি যেন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা বা নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে অংশ না নেন, সে নির্দেশনা অবশ্যই থাকবে, থাকা বাঞ্ছনীয়। সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে অন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু যিনি ওখানে ভোটার, ওই এলাকার সংসদ সদস্য, তাকে নিজের ভিটে-বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা কি সমীচীন হয়েছে?
মঙ্গলবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন- ‘আইনপ্রণেতা হয়েও আইন ভাঙলে ইজ্জত গেল কার?’
এর আগে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনি এলাকা ত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে নির্দেশনা না মেনে এমপি বাহার নির্বাচনি এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন এবং নির্বাচনি প্রচারণায়ও অংশ নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনারও (সিইসি) বলেছেন, আইনি কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের। যে কারণে এমপিতে নির্বাচনি এলাকা ত্যাগ করাতে তারা বাধ্য করাতে পারেন না। তবে এমপি বাহার আইনপ্রণেতা হয়েও আইন ভাঙলে কার ইজ্জত যায়— এমন প্রশ্নও তোলেন তারা।
একজন সংসদ সদস্যকে নির্বাচনি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার এই বিষয়টি নিয়েই দ্বিমত পোষণ করছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমার প্রথম প্রশ্ন— যিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য, ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি ওই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটার, তাকে নির্বাচন কমিশন এলাকা ছাড়ার কথা বলতে পারে কি না। এটি কি তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ নয়? তাহলে তো ঢাকা শহরে যখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে, তখন ঢাকা থেকে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদেরও ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এলাকা ছেড়ে যেতে হবে— এমন বিধি দুনিয়ার কোথাও নেই। সংসদ সদস্যরা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না— এমন বিধান ভারতে নেই, পাকিস্তানে নেই, ইংল্যান্ডে নেই, ইউরোপে নেই, অস্ট্রেলিয়াতে নেই, জাপানে নেই— কোথাও নেই। সেই আইনও কিন্তু বৈষম্যমূলক।
আরও পড়ুন- কুমিল্লা সিটি ছাড়েননি এমপি বাহার, সিইসি ‘অসহায়’
নিজে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় এলাকায় ছিলেন জানিয়ে ড. হাছান বলেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আমি মন্ত্রী এবং আমি চট্টগ্রাম শহরে ছিলাম। কোনো নির্বাচনি প্রচারণায় আমি অংশ নিইনি। বাড়ি থেকে দুয়েকবার বের হয়েছি প্রটোকল ছাড়া। এখন আজ অনেক কাগজে দেখলাম, এটি (এমপি বাহারের কুমিল্লায় অবস্থান) নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এখানে নির্বাচন কমিশন কী ভুল করেছে, আগে সেটি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা কখনো কোথাও দেওয়া হয়নি।
এর আগে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রক্তদান ও জনহিতকর কর্মসূচির জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭২ সালের ১০ জুন দেশে প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক পরে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম নিজে রক্ত দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন।
আরও পড়ুন- ৩০০ এমপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কিনা জানি না: সিইসি
অবকাঠামোগত বা বস্তুগত উন্নয়ন কেবল নয়, বাংলাদেশকে মানবিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র, একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আর মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানবিকতার বিকাশ প্রয়োজন। যারা মানবিকতা প্রদর্শন করে, মানবিক কাজ করে তাদের প্রশংসা করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. নিজামউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোটিভেশন এম. রেজাউল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। রক্তদানে বিশেষ অবদানের জন্য সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম দিলালকে প্লাটিনাম পদকসহ রক্তদাতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর