Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুর্গতদের দিকে না তাকিয়ে সরকার সেতু উৎসব নিয়ে ব্যস্ত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুন ২০২২ ১৯:৫৩

ঢাকা: বন্যাদুর্গত মানুষের দিকে না তাকিয়ে ‘সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব নিয়ে ব্যস্ত’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ভাটারায় ঢাকা উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ড সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি এই দুঃসময়ে জনগণের এই কষ্টের সময়ে সরকার ব্যস্ত হয়ে আছে উৎসব নিয়ে। তারা পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন নিয়ে এতো ব্যস্ত যে মানুষের কল্যাণের দিকে তাকানোর কোনো সময় নেই, মানুষের কষ্টের দিকে তাকানোর সময় নেই।’

‘আমরা দাবি করছি বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং এই সমস্ত অঞ্চলের জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক কোনো বিলম্ব না করে। আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিলেট, সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম সমস্ত অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। গতকালের যে নিউজ সেই নিউজ হচ্ছে ফারাক্কার সকল বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সব নদীর পানি এখন বাড়তে থাকবে। এদেশের মানুষকে ভাসিয়ে দেবে, তাদের বহুদিনের যে কষ্ট করা যে ফসল সেই ফলসকে নষ্ট করবে, তাদের বাড়ি-ঘর নষ্ট করবে, তাদের গোবাদি পশু নষ্ট করবে, তাদের সমস্ত সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কেন এই বন্যা? ক্লাইমেট চেইঞ্জ হচ্ছে সেজন্য বন্যা আসতে পারে। কিন্তু সেই বন্যাকে মোকাবিলার জন্য বা সেই বন্যায় যাতে কম ক্ষতি হয় সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তারা গত এক যুগেও ভারতের সঙ্গে যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে, সেই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবন্টনের যে চুক্তি সেই চুক্তি করতে সক্ষম হয় নাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে বহুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির মূলা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত করা হয় নাই। ফারাক্কার পানি হঠাৎ করেই যে তারা (ভারত) গেইট খুলে দেয় তখন যে পানির ঢল আসে সেই ঢল সামলানো সম্ভব হয় না। আজকে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একই ঘটনাগুলো ঘটছে। আজকে এটার জন্য সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি দায়ী।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা হবে না কেনো? যে সমস্ত হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং ব্রিজ দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এতো দুর্নীতি হয়েছে যে, সমস্ত বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা ভেঙে যাচ্ছে। সব কিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন তারা (সরকার) নতুন একটা গান শুরু করেছে। সেই গানটা কী? যে বাংলাদেশ এই যে পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন হবে, সেখানে নাকি বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জাতির সামনে বলেন সেই দুর্ঘটনাটি কারা করছে- পরিস্কার করে বলেন।’

‘আমরা দেখছি যে, বরাবরই আপনারা এই সমস্ত কথা বলেন। নিজেরা দুর্ঘটনা ঘটান তারপরে এটা বিএনপির ওপরে চাপিয়ে দেন। এটা হচ্ছে আপনাদের চরিত্র, এটা আপনাদের নীতি’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড আপনাদের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে। যে ডিপোতে আগুন লেগেছে, সেই ডিপোর মালিক আপনাদের লোক, আওয়ামী লীগের একজন নেতা। সেখানে তাকে গ্রেফতার না করে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে যারা আহত হয়েছে, তাকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। অর্থটা কী? অর্থটা হচ্ছে তারা ওই সমস্ত কাজ করবে, অর্থ আয় করবে আর বিএনপির লোকজন যারা কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় এসেছে, সুইস ব্যাংকের বাংলাদেশিদের টাকার পরিমান গত এক বছরে তিন গুণ বেড়েছে। যারা চুরি করছে, যারা লুট করছে তারা পাচার করে সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তারা কানাডাতে বেগমপাড়া তৈরি করেছে, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হাউজ তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে মানি না। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। যদি সেটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয়। আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আপনাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে কিছু প্রস্তাব করা হছে। সেটা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। আমি বিস্মিত হয়ে গেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষ ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশে সবচাইতে মেধাবী মানুষদেরকে শিক্ষা দিয়ে সমাজে পাঠিয়েছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সামাজের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রস্তাব করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী আছে- এর মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য বিশেষ ফি অর্থাৎ বেশি টিউশন ফি দিতে হবে। কারণ তারা ধনীর সন্তান।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই কেরেক্টারের নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইজ এ সেন্টার অব এক্সসিলেন্স যেটা গোটা দেশের সবচাইতে ভালো মানুষের ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। এখানে ভর্তি হয়ে তারা তাদের শিক্ষা শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারতো। এখানে আমাদের জনগনের ট্যাক্সের টাকা.. যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা পাবলিক ইউনিভার্সিটি বলি সেগুলোতে অর্থ দেওয়া হয় তা পরিচালনার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ আজকে সেই চরিত্রটাকে নষ্ট করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবার হীন চক্রান্ত করছে। আমরা এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করছি, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

৩৯ নং ওয়ার্ড আহবাংক এসএম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর বিএনপির আবদুল আলি নকি, আতিকুল ইসলাম মতিন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান,আখতার হোসেন, মোস্তফা জামাল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেতু উৎসব


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর