Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দৈনিক ঘাটতি ২ হাজার মেগাওয়াট, মিতব্যয়ী হতে বলছেন প্রতিমন্ত্রী

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২২ ০০:২১

প্রতীকী ছবি

ঢাকা: সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সাফল্যের পাশাপাশি লোডশেডিংকেও প্রায় বিদায় জানাতে সক্ষম হয়েছিল সরকার। মাস দুয়েক হলো সেই লোডশেডিং উপজেলা-জেলা পেরিয়ে এসে খোদ রাজধানীবাসীকেও নাকাল করে ফেলছে। গ্যাসের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিতরণ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও। তাদের বরাতে জানা যাচ্ছে, বিদ্যুতের দৈনিক ঘাটতি এখন ২ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছে গেছে।

বিজ্ঞাপন

চলমান পরিস্থিতির সংকট সহসাই মিলছে না— এটিও আগেই স্বীকার করে নিয়েছেন মন্ত্রণালয় ও বিতরণ সংস্থার সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছেন ফেসবুক পেজ থেকে। চলমান পরিস্থিতিতে তিনি এবার গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সবার প্রতি।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ২৭টি। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২টিতে। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে এখন প্রতিদিন ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতিতে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান অবস্থা ব্যাখা করে দীর্ঘ এক বার্তা দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। বার্তায় তিনি বলেন, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯-এর প্রভাব সব জায়গাতে পড়েছে। কোভিড-১৯-এর ধাক্কা যখন সবাই কাটিয়ে উঠছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারাবিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। কেবল উন্নয়নশীল দেশই নয়, অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে। যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানি বাজারকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্যপণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট আমাদেরও বিপদে ফেলে দিয়েছে।

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলার রফতানির অনন্য মাইলফলক অর্জন করেছে। অর্থাৎ গত একযুগে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে আমাদের শিল্পায়ন অতীতের সব সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের ইশতেহারে’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন। সেই রূপকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে হঠাৎ করেই কিছুটা ছন্দপতন দেখা দিয়েছে সব জায়গাতেই। এর প্রভাবে উন্নত দেশগুলোতেও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণেই যে বিদ্যুতের এই বেহাল দশা, সেটি সংশ্লিষ্ট সবাই আগেই জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৬০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। সেখানে আমরা দিতে পারছি মাত্র ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর বেশি গ্যাস আমরা দিতে পারছি না। কারণ আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে কৃষি ও শিল্প খাতকে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনেও আমাদের অনেক গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে।

সার্বিকভাবে দেশের গ্যাসের মজুতের তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বড় অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র দৈনিক ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিলাম দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে আমাদের খনিগুলোর রির্জাভ কমে যাওয়ার কারণে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করা হতো। কিন্তু আগে প্রতি ইউনিট এলএনজি ৪ ডলারেও পাওয়া যেত। এখন এর দাম ৪১ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যান্য জ্বালানি তেলের দামও দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। চড়া দামের কারণেই মূলত এলএনজি কিনছে না সরকার। ফলে গ্যাসের ঘাটতি প্রভাব ফেলছে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ শিল্প খাতে।

প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এত বেশি দামে এলএনজিসহ জ্বালানি আমদানি করলে দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। সরকার নিজস্ব জ্বালানির অনুসন্ধান, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান কূপগুলোতে আরও গভীরে খনন করে গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী তিন বছরের একটি আপগ্রেডেশন, ওয়ার্কওভারের স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি, যেন ৪৬টি কূপ থেকে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হয়।

বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবে না বলে আশ্বাস দিচ্ছেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আপনাদের সবার নিশ্চয় মনে আছে— ২০০৮ সালের আগে সারাদেশে দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। সেই কঠিন সময়ে আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই সংকটকালেও আপনাদের তার ওপরই বিশ্বাস রখাতে বলব। এ বছরের মধ্যেই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানি করা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

সবাইকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যায়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সংকট আমরা সবাই মিলেই পার করব। এ পরিস্থিতিতে সবার কাছে একটাই অনুরোধ— আসুন, আমরা সবাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যায়ী হই।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি নসরুল হামিদ বিপু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুৎ সংকট লোডশেডিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর