রাশিয়ার ওপর ‘স্যাংশন’ প্রত্যাহার চান প্রধানমন্ত্রী
৭ জুলাই ২০২২ ১৩:৫০
ঢাকা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আরোপিত স্যাংশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্যাংশন দিয়ে কোনো দেশ বা জাতিকে কখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষের শাস্তি দেওয়া; এখান থেকে সরে আসাটা বাঞ্ছনীয়।’
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮ তলা ভবন উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন শুধু রাজনৈতিক না অর্থনৈতিক কূটনীতিতে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ পৃথিবীটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে, সকলের সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করবো যেন মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দুভার্গ্য যখন সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সেই সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে, আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে স্যাংশন দিয়েছে। এই স্যাংশন দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু তাই না পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। কোথায় আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাব সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ না, আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। অন্তত উন্নত দেশগুলোকে বিশেষভাবে এটা বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত তারা যে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের কিন্তু দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আসলে কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ হচ্ছে। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ বা সকল দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। নিম্ন আয়ের দেশ সব দেশেই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। কারণ করোনা মহামারি থেকে কেবল সকলেই উদ্ধার পাচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর স্যাংশন। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ; এই চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।’
রাশিয়ার ওপর স্যাংশন প্রদানকারী দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। সেখানেই অনেক সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও। আমরা যেটা খবর পাই বিভিন্ন দেশ থেকে, আমাদেরও অনেক লোক সেখানে বসবাস করে, প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আমরা সবসময় চেষ্টা করছি, আমাদের যে মাটি এবং মানুষ আছে। আমরা উৎপাদন বাড়াব। আমাদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করে চলতে পারি। সেই ব্যবস্থা করবো। যদি আরও কাউকে সাহায্য করার দরকার হয় সেটাও করবো। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে গেলে আমাদের সার, ডিজেল প্রয়োজন, বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন সেটা আমরা পাচ্ছি না। কাজেই এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে? আমি ঠিক জানি না।’
‘এক দিক থেকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামিল। মানুষের যে অধিকার সেই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া, এখান থেকে সরে আসাটাই বোধহয় বাঞ্ছনীয় এবং সকলে সেটাই চাইবে, আমি মনে করি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।