Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিনজো আবের মৃত্যু: জাপানে এক রাজনৈতিক যুগের অবসান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৮ জুলাই ২০২২ ১৮:১৭

উঠে এসেছিলেন রাজনৈতিক পরিবার থেকে। পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে নিজেও নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতিতে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দুই মেয়াদে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিণত হয়েছেন জাপানের রাজনীতির অন্যতম এক নামে। রাজনীতির মাঠে থেকেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

তিনি শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দুই মেয়াদে। বৈশ্বিক মন্দার জের ধরে যখন জাপানের অর্থনীতি ভঙ্গুর, তখন অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলে পরিবর্তন এনে ঠেকিয়েছিলেন বড় ধরনের ধস। তার অর্থনৈতিক কৌশল রীতিমতো ‘আবেনোমিকস’ নামে স্বীকৃতি পেয়েছে অর্থনীতিবিদদের কাছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা দুই মেয়াদেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি ছাড়েননি। (৮ জুলাই) জীবনের শেষ দিনেও শুক্রবার দলের এক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময়ই এক দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন আবে। এর মাধ্যমে জাপানেও এক রাজনীতির যুগাবসান ঘটল বলেই মনে করছেন জাপানের রাজনীতিকরা।

আরও পড়ুন-

আবে রাজনৈতিক জীবন

শিনজো আবে’র দাদা কিশি নোবুসুকে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আবে’র বাবা শিনতারো আবে’ও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৯৩ সালে প্রথম নির্বাচনে জয় পান আবে।

ওই সময় থেকেই থেকেই জাপানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিতে শুরু করেন শিনজো আবে। নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন জাপানের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপপ্রধান। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন ওই সময়। পরে ২০০৫ সালে তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি তার ওপর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন।

২০০৬ সালে আবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫২ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত অল্প বয়সে আর কেউ দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। সেবার অবশ্য পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারেননি আবে। ২০০৭ সালে জাপান সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে হেরে যায় তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। শিনজো আবেও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

ওই সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, শিনজো আবে’র রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে গেছে। কিন্তু শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরই ফের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই এলডিপি সংসদের নিম্নকক্ষে বিপুল ব্যবধানে জয় পায়। ফের জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আবে। এরপর জাপান সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের একাধিক নির্বাচনে তার নেতৃত্বে জয় পায় এলডিপি। ২০১৪ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে জিতে এসে টানা মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২০ সালে ফের শারীরিক অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করলে ফের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এত দীর্ঘ সময় আর কেউ জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেননি।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও এলডিপি’র প্রধান হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করলেও তার জনপ্রিয়তায় জোয়ার-ভাটা ছিল সবসময়ই। তারপরও পার্টির ওপর তার যে প্রভাব ছিল, সেটি অগ্রাহ্য করতে পারেনি কেউ। সে কারণেই দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তাকে তৃতীয় মেয়াদে পার্টিপ্রধান নির্বাচিত করা হয়েছিল।

জাতীয়তাবাদী আবে

রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে’র মধ্যে জাতীয়তাবাদী ধারাই ছিল লক্ষণীয়। প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতিতে তার অবস্থান ছিল অনেকটাই আগ্রাসী। জাপানের বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সংবিধান সংশোধনের জন্যও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জাতীয়তাবাদী অবস্থান থেকে শিনজো আবে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেগুলো অনেক সময়ই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে তার টোকিও’র ইয়াসুকুনি মন্দির সফর বিতর্ক জন্ম দেয়। ওই মন্দিরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী ও যুদ্ধ চলাকালে জাপানের সামরিকায়ন সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওই মন্দির তিনি আবার সফর করেন, যা দেশটির বামপন্থি রাজনীতিবিদদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয়।

প্রতিরক্ষা খাতে জাপান বরাবরই একটু রক্ষণশীল ছিল। তবে ২০১৫ সালে নিজেদের প্রতিরক্ষার অধিকার নিয়ে উচ্চকিত হন আবে। নিজেদের ও মিত্রদের সুরক্ষায় দেশের বাইরেও জাপানি সৈন্যদের সক্রিয় রাখার সুযোগ ছিল তার প্রস্তাবে। জাপানের অনেক নাগরিক এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধিতার মুখেও জাপান সংসদে সেই প্রতিরক্ষা নীতি পাস হয়।

‘আবেনোমিকস জাপানের অর্থনৈতিক সুরক্ষা

শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনৈতিক কৌশলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। তার অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলোকে নাম দেওয়া হয় ‘আবেনোমিকস’। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদে এই কৌশলের ওপর নির্ভর করেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে জাপান। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও একই কৌশল অনুসরণ করে সাফল্য পান আবে।

শিনজো আবে’র আবেনোমিকস কৌশলের কেন্দ্রে ছিল স্বল্পমেয়াদি ঋণে স্বল্প সুদহার। এর ফলে ভোক্তা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। ওই সময় তিনি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন। করছাড়সহ অর্থনৈতিক কিছু প্রণোদনাও চালু করেন। এর ফলে নারীদের কর্মসংস্থান বেড়ে যায়, অভিবাসীদেরও কাজ করার সুযোগ সহজ হয়। সার্বিকভাবে এতে জাপানের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসে।

২০২০ সালের বসন্তে এসে ফের অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হয় জাপান। এই সময় আবেনোমিকস কৌশল প্রশ্নের মুখে পড়ে। ওই সময়ই করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলায় তিনি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। করোনা সংক্রমণের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবে। এর ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলেই দাবি সমালোচকদের।

জাতীয়তাবাদ কিংবা অর্থনৈতিক কৌশল ‘আবেনোমিকসে’র সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জাপানের রাজনীতিতে শিনজো আবে’কে কখনো কেউ অগ্রাহ্য করতে পারেননি। জীবনের শেষ দিনটিতেও তিনি জাপানের শীর্ষ রাজনীতিবিদের সম্মানই পেয়েছেন। তার মৃত্যু জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবেই কাজ করবে বলেই জানিয়েছেন রাজনীতিবিদরা।

সারাবাংলা/টিআর

আবেনোমিকস জাপানের রাজনীতি জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টপ নিউজ শিনজো আবে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সম্পর্কিত খবর