ঢাকা: বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামরুল হাসানকে রাজধানীর পল্টন চামেলীবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. কামরুল হাসান রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি দল ১৭ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন চামেলীবাগ থেকে কামরুলকে গ্রেফতার করে।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জানান, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে তারা ধাওয়া করেন। তারপর মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারপর জানতে পারেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিৎ এর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর কামরুল ভারতে তার নানা বাড়িতে আত্মগোপন করেন। মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের দুইমাস পর সে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
গ্রেফতার কামরুল ১৯৯৪ সালে তার বাবার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তারা তিন বোন এক ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে কামরুল সর্ব কনিষ্ঠ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ২০০৫ সালে ঢাকার একটি কলেজে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন কামরুল।
২০১১ সালে এক সহপাঠীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধা হন। তার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। এ সময় জীবিকার সন্ধানে বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। প্রথমে তিনি ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূল হোতা জনৈক খোকন ও সোহেলের পরিচয় হয়। তারা তাকে প্রলুব্ধ করে যে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এভাবে ২০১৪ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন। অবৈধ উপার্জন দিয়ে তিনি কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করে। করোনা মহামারির মধ্যে লকডাউনের কারণে ওই ব্যবসা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই।
বিশ্বজিৎ হত্যার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটান ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাঁকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন।
বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। এ ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মামলার রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন।
পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে দুজন আপিল করলে তারাও খালাস পান।