দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সেই শিশুর ক্ষতিপূরণ-কল্যাণ চেয়ে রিট
১৮ জুলাই ২০২২ ১৯:০৩
ঢাকা: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
রিট আবেদনে দুর্ঘটনায় শিশুটির মা-বাবা এবং বোন নিহতের ঘটনায় তদন্ত চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুটির প্রাপ্ত বয়স হওয়া পর্যন্ত তার লালন পালনের খরচ সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব , সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কানিজ ফাতেমা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।
রিটকারীর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি খিজির আহেমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো.জাকির হোসেনের বেঞ্চে এ আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
গত শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা। এরপর ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির পথে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।
তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটি বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান।
তিনি জানান, নবজাতককে সব ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। এখন সে সুস্থ এবং ভালো আছে। তবে তার হাতের ভেঙে যাওয়া হাড় প্লাস্টার করা হয়েছে। তা সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগমের আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলো- দশ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও। এ ঘটনায় শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে ত্রিশালের রায়মনি গ্রামসহ পুরো উপজেলার বাসিন্দারা।
পরে উপজেলার রায়মনি গ্রামে নিজ বসত ঘরের পেছনে পাশাপাশি কবরে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাকে দাফন করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম