অধ্যক্ষকে মারধরের অডিওর কথোপকথন ছিল ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে
১৮ জুলাই ২০২২ ২৩:৫৭
রাজশাহী: রাজশাহীতে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। অধ্যক্ষ নিজেও পরে জানিয়েছিলেন, এমপি তাকে মারধর করেননি। তবে ওই ঘটনা নিয়ে একটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হলে জানা যায়, অধ্যক্ষ মারধরের শিকার হয়েছিলেন এমপির কাছে। সেই অডিও রেকর্ড অবশ্য ‘ক্লোন করা’ বলে প্রচার করা হয়।
এবারে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার জানিয়েছেন, মোবাইলে অধ্যক্ষের ওই কথোপকথন ছিল তার সঙ্গেই। ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটি কোনোভাবেই ক্লোন করা নয়। আখতারুজ্জামান আক্তার যে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজটিও সেই দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদেই (ইউপি) অবস্থিত।
সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার বলেন, অডিওটি ক্লোন করা নয়। অধ্যক্ষের সঙ্গে যে ব্যক্তিকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, সেটি আমিই ছিলাম। আমার সঙ্গেই কথা বলেছিলেন অধ্যক্ষ। তিনি এমপির হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছিলেন।
আরও পড়ুন-
- এমপি কর্তৃক অধ্যক্ষকে মারধর নিয়ে অডিও ফাঁস!
- সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ বললেন ‘এমপি আমাকে মারেননি’
- এমপি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন ওমর ফারুক: বাকবিশিস
- কলেজ অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে
আখতারুজ্জামান আক্তার আরও বলেন, আমি এই ইউনিয়নে ১৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার সময়ে ওই এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এমপি কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করেছেন শুনে আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সেলিম রেজাকে ফোন করেছিলাম। ৯ জুলাই বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফোন করার পর তার সঙ্গে আমার ২২ মিনিট কথা হয়। এর মধ্যে ৯ মিনিটের অডিও প্রকাশ পেয়েছে।
অডিওতে দু’জনের যে কথোপকথন শোনা গেছে, তার পুরোটাই সত্য বলে দাবি করেন সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিও আমার সঙ্গেও কথা বলেছে। তদন্ত কমিটিকেও আমি একই কথা জানিয়েছি যে অডিওটি সঠিক।
আক্তার বলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজা চাপে পড়ে কিংবা ভয়ে এখন যা-ই বলুন না কেন, তিনি আমাকে এমপির কাছে মারধরের কথা জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটিকে এটি বলেছি। অডিওটি পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হবে সেটা সঠিক।
এর আগে, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ৭ জুলাই তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অন্য অধ্যক্ষদের সামনে সেলিম রেজাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন অধ্যক্ষ। তাকে মারধরের খবরে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে ১৪ জুলাই অধ্যক্ষকে নিয়ে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
ওই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দাবি করেন, এমপি তাকে মারধর করেননি। আর এমপি দাবি করেন, তাকে নিয়ে অধ্যক্ষকে মারধরের গুজব ছড়াচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
এর প্রতিবাদে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের একটি অডিও রেকর্ড দেন। পরদিন রোববার এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে যান। তিনি যখন কলেজে ছিলেন তখনই ফেসবুকে এমপির মালিকানাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে অধ্যক্ষের বক্তব্য প্রচার করা হয়, যেখানে অধ্যক্ষ দাবি করেন যে প্রচার করা অডিওটি ক্লোন করা।
এরপর আসাদুজ্জামান আসাদও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, অডিওটি ক্লোন করা নয়। রোববার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে আসাদ লিখেন, যে বা যারা বলতে চান, এটি রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষের কণ্ঠ না, তাদের সম্মানের সঙ্গে সাথে চ্যালেঞ্জ দিলাম— এটি ক্লোন প্রমাণ করতে পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।
আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে যখন অডিওটি প্রকাশ করেন, তখন অধ্যক্ষের সঙ্গে কোন ব্যক্তির কথোপকথন হয়েছিল তা গোপন রেখেছিলেন। তবে এক দিন পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আখতারুজ্জামান আক্তার নিজেই জানালেন, অধ্যক্ষের ফোনালাপের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি তিনিই ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর
অডিও ফাঁস অধ্যক্ষ সেলিম রেজা অধ্যক্ষকে এমপির মারধর অধ্যক্ষকে মারধর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী