জামিন জালিয়াতি: আসামিকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
২৫ জুলাই ২০২২ ২১:০৩
ঢাকা: জামিন জালিয়াতি করায় কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদকে (৪৫) কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করতে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ প্রত্যাহার পূর্বক বাতিল করেছেন আদালত। পাশাপাশি জামিন জালিয়াতির এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও কক্সবাজার সেশন জজ আদালতকে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এক মাস এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি এস এম কদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে জাহিদ সারোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন ফকির, এস এম ফায়েজ, আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সুব্রত চৌধুরী, নূরুল ইসলাম আনসারী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক। আর এ মামলায় তথ্য প্রদানকারী (ইনফরমাল) হিসেবে ছিলেন আইনজীবী শোয়েব খান ও মতিন উদ্দিন আনোয়ার।
এর আগে, কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ ওরফে মোহাম্মদ (৪৫) নথি জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এলাকায় চাউর হয়েছে- তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেছেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিন জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলাটি না চালানোর জন্য আবেদন করেন। তবে জালিয়াতি করে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেওয়ার বিষয়টি কোর্টের নজরে আসায় আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজকের (২৫ জুলাই) দিন ধার্য করেন।
এরপর আদালত আজ আসামিকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজীবী সোয়েব খান বলেন, ‘আদালত জামিন জালিয়াতির ঘটনায় আসামির আইনজীবীর মামলা না চালানোর আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। পাশাপাশি আসামিকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও কক্সবাজার সেশন জজ আদালতকে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
জানা যায়, গত ২৩ জুন হাইকোর্টে আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদের জামিন চেয়ে আইনজীবী নুরুল হুদা আনসারী আবেদন করেন। হাইকোর্টের জামিন আবেদনে মামলার এফআইআরের সার্টিফায়েড কপি জমা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়। মূলত আসামি মোহাম্মদ মামলার ২ নম্বর আসামি।
গত ৩০ জুন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার শুনানি শেষে ওই আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। গত ১৩ জুলাই নথি জালিয়াতি করে ওই আসামি কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়ার খবরে কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে ১৪ জুলাই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানিয়ে চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার বাদী/সংবাদদাতা পক্ষ আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন-বর্ণিত মামলার এজহারনামীয় দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ এবং এজাহার বহির্ভূত আসামি নুরুল হকসহ পাঁচ আসামির নামে গত ৩১ মে দায়েরকৃত জামিনের দরখাস্ত শুনানি শেষে নামঞ্জুর হয়েছে।
কিন্তু এ আদেশের প্রকৃত জাবেদা নকল হাইকোর্টে দাখিল না করে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশের পক্ষে আদালতের আদেশ জাল জালিয়াতিক্রমে তথাকথিত সৃজিতা জাবেদা নকল হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করা হয়েছে।
সৃজিত জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, আদালতের নামঞ্জুরের আদেশের বক্তব্য বাদ দিয়ে জাল জাবেদা নকলে ভিন্নরূপ বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগে দাখিলি এজাহারের জাল জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি হিসেবে এবং তার পুত্র ২২ নম্বর আসামি মো. ইয়াছিনকে (১৮) দুই নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, শিশু বিবেচনায় এজাহারনামীয় ২২ নম্বর আসামি মো. ইয়াছিন ১৪ বছরের শিশু দাবি করে ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিন পেয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল বিকেলের দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাং ঘর বাজারে মোরশেদ আলী মোরশেদ বলিকে জনসম্মুখে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে গত ৯ এপ্রিল সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই মো. জাহেদ আলী।
চাঞ্চল্যকর হত্যার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী মোহাম্মদসহ মামলার অন্য পাঁচ জন আসামিকে গত ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার করেন র্যাব-১৫ এর একটি দল। পরে গত ১২ মে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মো. আলী প্রকাশ মোহাম্মদসহ অপর ৫ জন আসামি জামিন চেয়ে করা আবেদন নামঞ্জুর করেন।
পরবর্তী সময়ে তারা হাইকোর্টের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জামিন আবেদন মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়ে রুল জারি করেন। পরে গত ৬ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জামিনের আদেশটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিননামা গ্রহণ করে আসামির জন্য মুক্তিনামা ইস্যু করলে জেলা কারাগার থেকে ওই দিনই তিনি মুক্তি পান।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম