‘দেশের সড়ক ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার’
৩০ জুলাই ২০২২ ১৮:২০
ঢাকা: দেশের সড়ক ব্যবস্থাকে সরকার নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ শিক্ষার্থীর নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চমৎকার সুট-কোট পরে খুব সুন্দর করে বলেন যে, আওয়ামী লীগ যেটা করছে সেটা অতীতে কখনো হয় নাই। আপনি তো গোটা সড়ক ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে।’
‘গতকাল ১১ জন ছাত্র মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছিল। ট্রেন এসে মেরে দিয়ে তাদের সবাইকে হত্যা করেছে। এরকম অসংখ্য নজির প্রতিদিন আমরা দেখতে পারি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশের স্বপ্ন ধবংস হয়ে যাবে। আমরা আশা করেছিলাম গণতান্ত্রিক দেশ পাব, আমরা আশা করেছিলাম যে, এখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু সব কিছুকে এই আওয়ামী লীগ চুরি-ডাকাতি করে ধবংস করে দিয়েছে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসন গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধবংস করেছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে রসাতলে নিয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেখান থেকে দেশকে টেনে তুলতে হবে। বিএনপি হচ্ছে- সেই দল যে দল জনগণের দল, বিএনপি হচ্ছে- সেই দল যে দল জনগণকে স্বপ্ন দেখায়। নিঃসন্দেহে জনগণের আন্দোলনে জয়লাভ করে যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি তাহলে অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধান করব এবং এই দেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।’
বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো শুরু করল এবং এখন যা হিসাব দেখায় তাতে দেখা যায় যে, প্রয়োজনের অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন তৈরি করেছে। কিন্তু আজকে লোড শেডিং কেন? কারণ হচ্ছে-দুর্নীতি-চুরি, মেগা চুরি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ। তারা (সরকার) এই কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্ট ও অন্যান্য বিদ্যুৎ প্ল্যাটের চুক্তি করেছে- যে চুক্তিতে বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের টাকা দিতে হবে। সেই টাকার হিসাব শোনেন। সামিট গ্রুপ- এটা আজিজ খানের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খানের বড় ভাই তিনি- এই গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ নয় হাজার ২৭৮ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এগ্রিকো ইন্টার ন্যাশনাল ছয় হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ছয় হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ চার হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল তিন হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, বাংলাক্যাট তিন হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, ওরিয়ন গ্রুপ তিন হাজার ৪৫২ কোটি টাকা- এরকম ১০টা গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকা আপনাদের (জনগণ) পকেট থেকে বের করে নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু তাই না, আজকের পত্রিকায় খবর আছে যা এলার্মিং। আমাদের সমুদ্র থেকে, বা দেশের মাটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য আমরা একটা সারজার্চ দিই, পয়সা দিই। তা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করেছিল। সেটার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এই সরকার গ্যাস কেনার জন্য নিয়ে গেছে। এটা আরেক বাটপারি, আরেকটা ডাকাতি।’
‘একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে দেশের বাইরে, আরেকদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি-এলপিজি গ্যাস আমদানি করছে। কারা আমদানি করেছে? তাদের আপনারা চেনেন। এরা সব আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী। এভাবে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের নামে একটা ভাওতাবাজি জনগণের সামনে, বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। আবার তারা কি বলে? উন্নয়নের রোল মডেল, উন্নয়নের মিথ। বিশ্বকে ভুল বুঝাতে থাকে যে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। চতুর্দিকে টানেল, চ্যানেল, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল— এসব দেখাচ্ছে, এতে দেশের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অর্থনীতিবিদরা বুঝেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর দক্ষিণের হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, যুব দলের মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, সুমন ভুঁইয়া, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম