বাগেরহাটে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ৮ লাখ মানুষ
৫ আগস্ট ২০২২ ০৮:০৬
বাগেরহাট: সুন্দরবন ও সাগর ঘেঁষা জেলা বাগেরহাট। সাগর উপকূলের কারণে এর একদিকে থৈ থৈ পানি। তবে তা সুপেয় নয়, লোনাজল। জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় গভীর বা অগভীর কিছু নলকূপ রয়েছে। তবে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ক্লোরাইডের পরিমাণ চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। এছাড়া এসব উপজেলার আট লাখ মানুষকে পানির জন্য বৃষ্টি ও পুকুরের ওপরও নির্ভর করতে হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের কারণে পুকুর ও খাল-বিলও শুকিয়ে গেছে। যেকারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ফলে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানান রোগ।
এই অবস্থায় জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ভ্রম্যমাণ পাঁচটি পানি বিশুদ্ধকরণ গাড়ির মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করছে। কিন্তু তা মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব এলাকায় গভীর পুকুর ও পর্যাপ্ত পিএসএফ স্থাপন করা না হলে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো যাবে না।
জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় ও পানির স্তর ১৬ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় এসব উপজেলার পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। এছাড়া গভীর বা অগভীর নলকূপ দিয়ে লবণাক্ত পানি ওঠায় তা খাবার উপযোগী নয়। অধিকাংশ পিএসএফগুলো (পন্ড সেন্ড ফিল্টার) অকেজো হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় এই পাঁচ উপজেলার আট লাখ মানুষ খাবার ও রান্নার পানিও পাচ্ছেন না। দূর-দুরান্ত থেকে নারী-পুরুষরা কলসে করে ভ্যানযোগে পানি সংগ্রহ করে পান করছেন। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের অনেককে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে।
এদিকে, প্রচণ্ড তাপদাহে সিডর ও আইলা বিধ্বস্থ শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা, কচুয়া উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপন না হওয়ায় এখানকার মানুষদের নির্ভর করতে হয় পুকুর ও দীঘির উপর। কিন্তু বর্তমানে এসব এলাকার পুকুর ও দীঘি শুকিয়ে গেছে। সেজন্য বেশি বেশি পুকুর খনন, পুনঃখনন ও পিএসএফ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে তারা।
এলাকাবাসী বলছে, প্রতি বছরই কমবেশি সমস্যা হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখানে অনেকেরই পুকুর নাই। আবার অনেকের বড় বড় পুকুর থাকলেও সেখান থেকে পানি নিতে দেয় না। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় পুকুর থাকলেও সেগুলো খনন বা সংস্কার করা হয় না। সেজন্য শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়।
এ বিষয়ে শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন সারাবাংলাকে, ‘উপকূলীয় এলাকা শরণখোলায় তীব্র পানির সংকট চলছে। পুকুর, নালা, খাল-বিলের পানিতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আবার পানি যে ফুটিয়ে পান করবে তাতেও মাটির গন্ধ আসছে। আমাদের ব্যাপক পরিমাণে পুকুর খনন করা দরকার, খাল খনন করা দরকার। যাতে বর্ষা মৌসুমে পানি রিজার্ভ থাকে। পাশাপাশি পানির প্ল্যান্ট বসাতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতিলিটার খাবার পানিতে উপকূলীয় এলাকার জন্য ক্লোরাইডের পরিমাণ ১০০০ মিলিগ্রাম থাকার কথা। কিন্তু এসব এলাকার ভূ-গর্ভস্থ প্রতি লিটার পানিতে বর্তমানে ক্লোরাইডের পরিমাণ ৪০০০ মিলিগ্রাম। সেজন্য এসব এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য আমরা ২০০টি পুকুর খনন করেছি। প্রতিটি পুকুরে সোলার পিএসএফ’র মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় ৪৫ কোটি টাকার একটি ডিপিপি অনুমোধনের অপেক্ষায় আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সুপেয় পানির সমস্যা কেটে যাবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম